পুরো ট্রেনের পাহারার দায়িত্ব এক কনস্টেবলের। ট্রেনের ৮০ দরজা দিয়ে যাত্রী উঠানামায় নজর রাখতে হয় তাকে। এই বেহাল দশাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে উৎসব চলছে অপরাধীদের। অচল সিসি টিভি ক্যামেরা। প্লাটফরমে নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। প্রতিদিন হাজার-হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়তে ট্রেনে উঠছেন এই স্টেশনে। জানা যায়, প্রতিদিন বিভিন্ন পথে চলাচলকারী ১৫/২০টি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন যাত্রাবিরতি করে এই স্টেশনে। ভ্রমণ করেন কমপক্ষে তিন হাজার যাত্রী। প্রতিটি ট্রেনেই ভিড় ঠেলে যাত্রীদের উঠতে হয়। এই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। পকেট হাতড়ে বের করে নিচ্ছে মোবাইল-ম্যানিব্যগ। ব্যাগ কেটে নিয়ে যাচ্ছে মালামাল।
২৫ জানুয়ারি শহরের পূর্ব পাইকপাড়ার সাদমান সাকিব ভীড় ঠেলে আন্তঃনগর জয়ন্তিকা ট্রেনে উঠেই দেখেন পকেটে মোবাইল নেই। শুধু সাদমান নয়, এমন ঘটনার শিকার প্রতিদিনই কোন না কোন যাত্রী। টাকা-পয়সা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার খোয়ানো যাত্রীদের কান্নার শব্দে স্টেশনের পরিবেশ বিষাদময় হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন শিকার ধরার জায়গা হয়ে উঠেছে অপরাধীদের। বেহাল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই দায়ী করেন যাত্রীরা। স্টেশনের ২নম্বর প্লাটফর্মে জিআরপি পুলিশ ফাঁড়ি। ইনচার্জ হিসেবে একজন এসআই, একজন এএসআই, একজন এটিএসআই ও ১৪ কনস্টেবল। কিন্তু বর্তমানে আছে ১১ জন। ৩ বছর আগে এই ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলো ২২ কনস্টেবল। এখন ৯ জন। বর্তমানে থাকা ১১ লোকবলের মধ্যে ২ কনস্টেবলের ডিউটি রয়েছে আবার আশুগঞ্জে। বাকী ৭ জনের মধ্যে ৪ কনস্টেবল পালাক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের দুই প্লাটফরমে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করেন। সেই হিসেবে এক প্লাটফর্মের নিরাপত্তার দায়িত্ব এক কনস্টেবলের ওপর।
ফাঁড়ির এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনে যদি ২০ কামরা হয় তাহলে ৮০ দরজা। ৮০ দরজায় নজর রাখা এক কনস্টেবলের পক্ষে কঠিন। মেস ম্যানেজার, অফিসের দায়িত্ব পালন, ডাক নিয়ে যাওয়া, কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয় বাদবাকি ৫/৭ জনকে। এছাড়া ছুটিছাটা ও শারিরীক অসুস্থতায় নিয়মিতই ২/১ জন থাকছেন ডিউটির বাইরে। একজন কনস্টেবল ডিউটি শেষে ৬ ঘণ্টা সময় পাচ্ছেন শুধু বিশ্রামের।
ফাঁড়ি ইনচার্জ মো. মোজাম্মেল খান বলেন, সীমিত লোকবল দিয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের চেষ্টা করছেন তারা। ডিউটি না থাকলেও তারা সবাই ডিউটি করছেন। আসামি ধরছেন, চালান দিচ্ছেন। মালামাল উদ্ধার করছেন। যাত্রী পরিমাণ বেশি। এরপর প্রচণ্ড ভীড়ের মধ্যে কাজটা করতে হয়। যাত্রীদেরও সচেতন থাকতে হবে।
গত ৬ মাসে ৪টি মামলা হয়েছে আখাউড়া জিআরপি থানায়। স্টেশনের ২নম্বর প্লাটফরমের সবকটি সিসি টিভি ক্যামেরা অচল। ঢাকার পথে এই প্লাটফর্ম থেকেই উঠতে হয় যাত্রীদের। আর এখান থেকে ঢাকা গন্তব্যেই যাত্রী হয় সবচেয়ে বেশি।
স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. শোয়েব জানান, ৯টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে সচল ৭টি। ২ নম্বর প্লাটফর্মের দুটি ক্যামেরা অচল।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা