২৩ মে, ২০২০ ১৩:৩০

পাখিপ্রেমী পুলিশ

জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা

পাখিপ্রেমী পুলিশ

চুয়াডাঙ্গা শহরের মানুষ তাকে ‘পাখিপ্রেমী পুলিশ’ বলেই চেনেন। তিনি জেলা পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি এক ঝাঁক পাখির মুখে নিয়মিত খাবার তুলে দেয়া তার নেশায় পরিণত হয়েছে। অনেকেই তাকে পাখিদের অন্নদাতাও বলেন। 

শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিদিন সকালে ও দুপুরে শহরের শহীদ হাসান চত্বরে দেখা যায় মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসকে। এসময় তাকে ঘিরে থাকতে দেখা যায় এক ঝাঁক পাখি। নিজ হাতে দিনে দু’বার ক্ষুধার্ত এসব পাখিদের মুখে খাবার তুলে দেন তিনি। মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস শহীদ হাসান চত্বরে এলেই কোথা থেকে যেন পাখির ঝাঁক ছুটে আসে তাঁর কাছে।

ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিলের ২৪ তারিখ। করোনা পরিস্থিতির কারণে চুয়াডাঙ্গা শহর অনেকাংশে অচল। সেসময় বাজারের সকল খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁও বন্ধ। কর্মহীন হতদরিদ্রদের মতোই খাবার সংকটে পড়েছে অসহায় পশুপাখিরাও। পেশাগত কাজে ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস এলেন চুয়াডাঙ্গা শহরের জিরো পয়েন্ট শহীদ হাসান চত্বরে। হঠাৎ ভয়কে উপেক্ষা করে একদল পাখি ঘিরে ধরলো সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসকে। শুরু হলো কিচিরমিচির শব্দে পাখিদের আর্তনাদ। 

বিষয়টি বুঝতে পেরে সাথে সাথে পাখিদের জন্য কিছু খাবার কিনে আনলেন তিনি। নিজ হাতে খাওয়ালেন ক্ষুধার্ত পাখিদের। এরপর বিষয়টি নিয়মে পরিণত হলো। এখন মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস শহীদ হাসান চত্বরে এলেই ছুটে আসে পাখির দল।

মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শহীদ হাসান চত্বরের পাখির দল তার পরিবারের অন্যতম সদস্যে পরিণত হয়েছে। এখন পেশাগত দায়িত্বের পর নিজের সংসারের মতোই খেয়াল রাখতে হয় পাখিদের। দিনে দু’বার পাখিদের সান্নিধ্য তাকে আন্দোলিত করে। পাখিদের প্রতি এ দায়িত্ববোধ উপভোগ করেন তিনি।

পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের মিনহাজ উদ্দীন বলেন, সকালের দিকে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার এলাকায় এলেই পুলিশের সাথে পাখিদের সখ্যতার দৃশ্য চোখে পড়ে। বিষয়টি তার কাছে বেশ ভালো লাগে বলেও জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গায় বন্য পশু ও পাখিদের নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কেয়ার ফর আনক্লাইমড বিস্ট ‘কাব’র সভাপতি বখতিয়ার হামিদ এ বিষয়ে বলেন, পাখিরা মূলত প্রকৃতি থেকে খাবার সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের পাখিরা পূর্ব থেকে মানুষের মাধ্যমেই খাবার পেয়ে আসছিলো। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে পাখিদের খাদ্যের উৎসে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। অন্যদেরও পশুপাখির প্রতি সহমর্মী হওয়া দরকার।


বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর