রাজশাহীর পর এবার পাবনার পদ্মার চরে প্রথমবারের মতো দেখা মিলল বিলুপ্তপ্রায় ভয়ংকর বিষধর সাপ ‘রাসেল ভাইপার’ বা চন্দ্রবোড়ার। গত মঙ্গলবার (২৬ মে) সকালে সদর উপজেলার চর কোমরপুর এলাকার পদ্মার চরে মাঝারি আকৃতির রাসেল ভাইপার সাপটিকে দেখতে পেয়ে ক্যামেরাবন্দি করেন নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটির সহ-সভাপতি সুপ্রতাপ চাকী।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার সকালে কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে চর কোমরপুর এলাকার পশ্চিম দিকের একটি চরে পাখির ছবি তুলতে গিয়ে হঠাত করেই সাপটি চোখে পড়ে। সাপটি এতটাই ক্ষীপ্র গতির যে ক্যামেরা তাক করতেই দ্রুত একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। সাপটির শুধু লেজের অংশের ছবি নিতে পেরেছি।
যেহেতু সাপটি মারাত্মক বিষধর ও আগ্রাসী প্রকৃতির তাই দ্রুত আমরা ওই এলাকা থেকে সরে এসেছি।
পড়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল এইচ খানের নিকট ছবি পাঠালে তিনিও সাপটি রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করেছেন।
সুপ্রতাপ আরও জানান, ২০১৩ সালে রাজশাহীতে দেখা মেলে সাপটির। এ পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে গত কয়েক বছরে এ সাপের কামড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে পাবনায় এই প্রথম সাপটির দেখা মিলল। বিলুপ্তপ্রায় বলে সাপুড়েরাও অনেক সময় সাপটি চিনতে পারেন না।
সুপ্রতাপ চাকী আরও বলেন, এর আক্রমণে সবচেয়ে বেশি মারা যায় কৃষক। সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয়েছে ধানক্ষেতে। তবে সাধারণত ঝোঁপ-ঝাড়, শুকনা গাছের গুড়ি, ডাব গাছের নিচে, গোয়াল ঘরে এ সাপ থাকতে বেশি পছন্দ করে। যেহেতু পদ্মার চরে কৃষকরা চাষাবাদ করেন, তাদের সতর্ক করা প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল এইচ খান জানান, চরিত্রগত ভাবে রাসেল ভাইপার বংশ বিস্তার করে খুব দ্রুত। অন্যান্য সাপ যেখানে ২০ থেকে ৪০টা ডিম দেয়, সেখানে একটি রাসেল ভাইপার ৮০টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। ফলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে রাসেল ভাইপার।
বরেন্দ্র অঞ্চলে এ সাপের আক্রমণ বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ওই এলাকার মাটি এবং রাসেল ভাইপারের গায়ের রং প্রায় এক। তাই অনেক সময় না দেখেই মানুষ কাছে চলে যায়। তাই এ সাপ দেখলে নিরাপদে সরে যাওয়াই উত্তম।
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, এখন পর্যন্ত স্থানীয় কেউ সাপটির ব্যাপারে প্রশাসনকে অবহিত করেনি। তবে যেহেতু সাপটি মারাত্মক বিষধর এবং বিলুপ্তপ্রায়, তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ঐ এলাকার চাষিদের সতর্ক করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ