মায়ের চিকিৎসা খরচ যোগাতে তেল চুরির ঘটনায় লালমনিরহাটে কিশোর মমিনুলের উপর পৈচাশিক নির্যাতন মেনে নিতে পারছেন না এলাকার মানুষ। বর্বর নির্যাতনের শিকার কিশোর মুমিনুলের বাড়িতে যেন বইছে শোকের মাতম। ছেলেকে নির্যাতনের শোকে মমিনুলের মা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এমন খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার কিশোরের অসুস্থ মায়ের খবর নিতে ছুটে যান তার বাড়িতে। দিয়েছেন নগদ টাকা, খাদ্য সামগ্রী ও ফল। পাশাপাশি তাগিদ দিয়েছেন মমিনুলকে সংশোধন হওয়ার।
জানা যায়, টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে দিশেহারা কিশোর মমিনুল গত মঙ্গলবার (৯ জুন) বিকেলে শহরের মিশন মোড় এলাকার সীমান্ত শপিং মল সংলগ্ন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিক্সা থেকে তেলের জারিকেন চুরি করে। তিন কেজির শরীশার তেলের একটি জারিকেন চুরির সময় প্রথমে অটোচালক তাকে আটক করলে বেধড়ক মারপিটের শিকার হয় ওই কিশোর। এ অবস্থায় সেখানে হাজির হন প্রভাবশালী আশরাফ আলী লাল।
দ্বিতীয় দফায় আবারও শুরু হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় পৈচাশিক নির্যাতন। লালমিয়া তাকে বেধড়ক মারধর করে মাটিতে ফেলে গলায় মুখে হাতে পা দিয়ে চেপে ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় চালায় নির্যাতন। সেই (মঙ্গলবার) রাতেই ভাইরাল হয় ওই ভিডিওটি। তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনে। মঙ্গলবার গভীর রাতেই সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে লালমিয়াকে।
এরপর গতকাল বুধবার (১০ জুন) দিনভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কোর্টে পাঠালে বিজ্ঞ আদালত জামিন না মঞ্জুর করে পাঠান জেল হাজতে। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হয়নি কিশোর মমিনুলের পরিবার ও তার প্রতিবেশিরা। তারা চাইছেন, এই নির্যাতনের একটি সুষ্ঠ বিচার হোক।
এদিকে, কিশোর মমিনুল ও তার মা মায়ের অবস্থা জানতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত আবাসনে গিয়েছিলেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা। পুলিশ সুপার কিশোর মমিনুল ও তার মায়ের পাশে দাড়িয়ে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর নেন।
এসময় তিনি তাদের সহযোগিতা হিসেবে নগদ দুই হাজার টাকা, চাল ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ও ফলমুল প্রদান করেন। পুলিশ সুপার জানান, আইন কোনমতেই নিজের হাতে তুলে নেয়া ঠিক না। কিশোর মমিনুলকে নির্যাতনের ঘটনায় আমরা ৪ জনকে গ্রেফতার করেছি, অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি মমিনুলকে ফিরে আসতে হবে স্বাভাবিক জীবনে।
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ