৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৩:৪৫

সড়ক দুর্ঘটনা থেকে প্রতিবন্ধী অদম্য মুন্না

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:

সড়ক দুর্ঘটনা থেকে প্রতিবন্ধী অদম্য মুন্না

পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নিয়ে ২০০৩ সালে মরুর দেশ সৌদি আরবে পাড়ি দেন হেদায়েতুল আজিজ মুন্না। সেখানে চাকুরির পাশাপাশি নিজের ব্যবসাও ছিল। জীবনযাত্রা ভালোই কাটছিল। ২০০৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তার সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। ঐ বছরই আগস্টের প্রথম দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হওয়ায় পঙ্গুত্ব বরণ করেন। ২২দিন কোমায় থাকার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে তাকে দেশে এনে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সাভারের সিআরপিতে বেশ কিছুদিন থাকতে হয়। পরবর্তীতে বাড়িতে ফিরে এসে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা চালায় হেদায়েতুল আজিজ ওরফে মুন্না। নিজে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারেন না। হুইল চেয়ারে ভর করে চলতে হয় তাকে। নিজে প্রতিবন্ধী হলেও চ্যালেঞ্জ নেন  প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করবেন।

তার দাবি সংকল্প অনুযায়ী কাজ করতে হলে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। সময় ও সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় হতে মা ও শিশুর প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে শর্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ডিগ্রি লাভের পর হোমিওপ্যাথি বিষয়েও ডিএইচএমএসডিগ্রি লাভ করেন। এরই মধ্যেই জীবন সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেন লাকী আক্তারকে। 

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ড্রিম ফর ডিসএ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে কাজ শুরু করেন মুন্না ও তার দল। প্রতিবন্ধী মেধাবী তরুণদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে একটি একীভূত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে প্রতিবন্ধীদের কম্পিউটার সহ নানাবিধ কারিগরি  প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মুন্না জানান ‘ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন এবং কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করাই তার লক্ষ্য। সংগঠনের গঠিত ডিডিএফ হুইল চেয়ার ক্রিকেট টিম বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করে ভারতের হুইল চেয়ার ক্রিকেট টিমকে সিরিজ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও অর্জন করে দু’বার। তিনি ডিডিএফ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দল এবং ডিডিএফ শারীরিক প্রতিবন্ধী ফুটবল দলও গঠন করেন। 

করোনা সংকটে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে স্বশরীরে দল নিয়ে ছুটে গিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগে বিতরণ করেছেন খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী।

প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেছেন জাতীয় পুরষ্কার। ২০১৯ সালের ৫ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসের বর্ণিল আয়োজনে তাকে সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে এ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড, সমাজসেবা অ্যাওয়ার্ড এবং ভারতের উচ্চ পর্যায়ের সম্মাননা হিসেবে অশোকা অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর