আর মাত্র দেড় মাস পরই শুরু হবে ধান কাটা। ধান পেকে ফসলি জমির মাঠ হয়ে উঠবে সোনালী রঙে। জমির ধান গাছ বড় হতে শুরু করেছে। চোখের সামনে অন্য কৃষকের জমির ধানকাটা দেখতে পারলেও এবার নিজের ফসলি জমির ধানকাটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় বৃদ্ধ কৃষক ইউনুছ মিয়া। প্রভাবশালীদের দাপটে এবার ৪৫ কানি জমিতে ধান চাষ করতে পারেনি অনেক কৃষক।
প্রায় ২০-২২টি পরিবার কয়েক হাজার মন ধান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। উপজেলার পত্তন ইউনিয়নে আতকাপাড়ার এই ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা করছেন তালবাহানা। অভিযোগের প্রায় দুইমাস পর তদন্তে আসে উপজেলা কৃষি অফিস। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে গত ২৫জানুয়ারি মনিপুরের ইউনুছ মিয়া নামে এক কৃষক সেচের পানি বন্ধ করে রাখা স্থানীয় ১০জন প্রভাবশালীর নাম উল্লেখ করে সমস্যা নিরসনে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনুছ মিয়া উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের মনিপুরের আতকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় কৃষক। তাঁর ছেলে লিলু মিয়া দুবাই প্রবাসী। তিতাস নদীর উপর দিয়ে বিজয়নগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশের হাইখোলা মৌজায় ছয়টি বিএস দাগে ২৯৩ শতক ও ক্রয়সূত্রে দলিলমূলে আরো কিছু নাল জমির মালিক লিলু।
প্রবাস থেকে উপার্জনের টাকায় লিলু এসব জমি ক্রয় করেছে। লিলু এসব জমি বিভিন্ন কৃষকের কাছে বর্গা দিয়েছেন। বর্গাচাষী এবং কিছু জমিতে তার পরিবারের লোকজন কৃষি জমিতে চাষাবাদ করেন। লিলু করোনার সময়ে দেশে আসলেও ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসে চলে গেছেন। দেশে থাকাকালীন সময়ে গত কয়েক মাস আগে একই গ্রামের প্রভাবশালী হৃদয় আহমেদ ওরফে জালালের সঙ্গে লিলুর কথা কাটাকাটি হয়। হৃদয় আহমেদের উস্কানিতে তার বংশের লোকজন ইউনুছ ও লিলুর পরিবারের উপর হামলা চালায়। অপরপক্ষ দ্বারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে হৃদয় আহমেদ তার বংশের জালাল মিয়া, আবু কালাল মিয়া, কালা মিয়া, জাহেদ মিয়া, নান্নু মিয়া, মিজান মিয়া, রাসেল মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, মনির হোসেন ও হাসু মিয়া মাধ্যমে ইউনুছের ছেলে লিলুর সেচের পানি দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে। এতে জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এতে ওই জমিগুলোর বর্গাচাষিরা এবং লিলুর পরিবার এ বছর জমিতে কোনো ধান লাগাতে পারেনি। নিরীহ বর্গাচাষীদের এখন অনাহারে-অর্থাহারে দিনানিপাত করছে। নিরীহ বর্গাচাষীদের অধিকার নিশ্চিত করণে ও তাঁদের বাঁচানোর স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউনুছ সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ জানান।
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খিজির আহম্মেদ জানান, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রবিউল হক মজুমদার বলেন, একটি মারাত্মক জঘন্যতম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আগামী মৌসুমে যেন এমনটা না হয় আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে. এম. ইয়াসির আরাফাত বলেন, সেচের পানি না দেওয়ার অভিযোগটি পেয়েছি। জমিতে পানি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল