জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে হবে। রাষ্ট্রক্ষমতা দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট, স্বেচ্ছাচারিতা চালাবার লাইসেন্স নয়। নির্বাহী বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকেই গনিমতের মাল বিবেচনা করছেন। কোন মব সন্ত্রাসীকেই সরকার বা রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের উদ্যোগে আজ সকালে সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে "ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তী- বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা " শীর্ষক আলোচনা সভায় ব্যক্তিরা এসব কথা বলেন।
ব্যক্তিরা বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাকে কোনওভাবেই বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।হাজারো শহীদের রক্ত ভেজা পথে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এরকম সময় বারে বাবে আসবে না। কারো কোন হঠকারিতা, বাড়াবাড়ি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে গণঅভ্যুত্থানের অসাধারণ অর্জন বিসর্জন দেয়া যাবে না। রাজনৈতিক ভিন্নতার মধ্যেও রাজনৈতিক দল ও জনগণের ন্যূনতম ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে জুলাই সনদ প্রনয়নে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতা দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট, স্বেচ্ছাচারিতা চালাবার লাইসেন্স নয়। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তিই প্রতিষ্ঠানেট ঊর্ধ্বে নয়। নির্বাহী বিভাগকে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। জবাবদিহি না-করার জন্যই প্রতিষ্ঠাসমূহ ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যক্তির ভালত্ব নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা অনুযায়ী সুযোগে সমতা ও অধিকারের সাম্য নিশ্চিত করা।তিনি আশা করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা নিয়ে সবাই মিলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করা যাবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অতীতের মত এবারকার ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পরিবর্তনের স্বপ্নকে কারো স্বার্থে জলাঞ্জলি দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকেই 'গানিমাতের মাল' হিসাবে বিবেচনা করে যা খুশি তাই করছেন। বিশ্বজিৎ আর আবরার ফাহাদের হত্যার সাথে ভাঙারির ব্যবসায়ী সোহাগের হত্যার পার্থক্য কোথায়! ১৫ বছরের আওয়ামী জাহেলিয়াতর সাথে মানুষ কেন এই সরকারের ১১ মাসের শাসনকে মেলানো চেষ্টা করবে! এটা আমাদের রাজনৈতিক পরাজয়।
তিনি বলেন, সরকারের অকার্যকারীতায় মব সন্ত্রাস বাড়ছে। সামাজিক নৈরাজ্যের সুযোগে রাজনৈতিক লুম্পেন ও মাফিয়া সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।কোন দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হলে একদিকে এই নৈরাজ্য আরও বাড়বে আর অন্যদিকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে।
বারিস্টার ফারহানা সরকারের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা সমালোচনা করেন এবং বলেন, চেয়ারের মজা নিতে গেলে দায়িত্বশীল আচরণও করতে হবে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুন নূরের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মজিদ আতাহারী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বাসদ (মার্কসবাদী) এর সমন্বয়কারী মাসুদ রানা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, আহত জুলাই যোদ্ধা এডভোকেট ফায়েজুর রহমান মনির প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতেই জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বীর শহীদদের প্রতি প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত