চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার গনকা-বিদিরপুর মহল্লায় সন্ত্রাসীদের ফেলে রাখা ককটেলকে খেলনা ভেবে তা নিয়ে খেলার সময় বিস্ফোরণে হাতের কব্জি হারানোর পর এখন মহরমির চোখের দৃষ্টিও হারিয়ে ফেলেছে। গত আড়াই মাসে ধরে কয়েক দফায় ঢাকায় চিকিৎসা করানোর পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন মহরমির দু’চোখই অন্ধ হয়ে গেছে।
ফলে নিরাশ হয়ে তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন স্বজনরা। ফলে শিশু মহরমিকে এখন অনিশ্চিত আগামীর পথে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে হবে। আর যারা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ককটেল ফেলে রেখেছিলো তাদের শাস্তি কতটা হবে এমন প্রশ্ন অনেকের। এক সময়য়ের প্রাণচাঞ্চল্যে হাসিখুশি মহরমি এখন পর-নির্ভরশীল। মা বা বাড়ির অন্য সদস্যদের সহযোগিতা ছাড়া ইচ্ছে হলেও সে কোথাও যেতে পারছে না। মূলত মায়ের সহযোগিতা নিয়েই চলছে তার সব প্রাত্যহিক কাজ।
দৃষ্টিহীনদের স্কুলে সে সুযোগ পেলে ভর্তি হবে এমনই তার বাসনা। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জে সে সুযোগ নেই। স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে মহরমি বলে আমি তো অন্ধ হয়ে গেছি, যদি সুযোগ পায় এখন অন্ধদের স্কুলে ভর্তি হব। এদিকে মহরমির মা মাসকুরা খাতুন জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মাসকুরা পার্শ্ববর্তী খেলার মাঠে সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া ককটেল বল ভেবে খেলার সময় বিস্ফোরিত হয়। এতে তার ডান হাতের কব্জি উড়ে যায় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে দেখা যায় চোখও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরপর চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। মিরপুরের বাংলাদেশ আই হসপিটালের প্রফেসর ডা. গোলাম রসুলের তত্ত্বাবধানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। কয়েকদফা চেষ্টার পর তিনি জানিয়েছেন, মহরমি আর দৃষ্টি ফিরে পাবে না। তবে তার নষ্ট হয়ে যাওয়া দুই চোখের মধ্যে একটা চোখে কিছু ককটেলের ইসপ্লিন্টার রয়ে গেছে। তাই অপারেশন করে চোখটিই অপসারণ করতে হবে দ্রুতই এবং তাতে খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। এখন তার মা টাকা জোগাড় করে ঈদের পর চোখ অপসারণ করবেন এমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে মহরমির পিতা মারা যাবার পর পুরো সংসার চালাচ্ছেন তার মা। এদিকে ককটেলে বিস্ফোরণের পর এলাকার বিবাদমান দু’টি গ্রুপের অন্তত ১৫ জনকে আসামি করে পুলিশ মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। সেই মামলায় অনেকেই গ্রেফতার হয়ে ফের জামিনে বের হয়ে এসেছেন।
সদর মডেল থানার ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, ওই ঘটনার পর পুলিশ বাদি হয়ে ৪টি মামলা দায়ের করেছিল। আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছিল কিন্তু এখন অনেকেই জামিনে আছেন। বর্তমানে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে, দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর