করোনার প্রভাবে সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। একদিকে তাঁতের উপকরনের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাটে পাইকার না আসায় ঈদে কাপড় বিক্রি করতে পারছেন তাঁতীরা। বিক্রি বন্ধ থাকায় শ্রমিকদেরও বেতন দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় ঈদ নিয়ে শঙ্কায় হয়ে পড়ছে তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা। তাঁত মালিকরা বলছে, করোনার কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে সরকারি সহায়তা না পেলে তাঁত শিল্প বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জের অর্থনীতিতে প্রধান ভুমিকা রাখে তাঁতশিল্প। এখানকার উৎপাদত শাড়ি-থ্রিপিচ, লুঙ্গি ও গামছা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়। দেশের বড় বড় কোম্পানী সিরাজগঞ্জের উৎপাদিত শাড়ি-লুঙ্গি কিনে নিজেদের কোম্পানীর লেভেল লাগিয়ে বাজারজাত করে থাকে। জেলার তাঁতশিল্পের সাথে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। উৎপাদনের ভিত্তিতে কাজ করে শ্রমিকরা সংসার চালায়। কিন্তু করোনার কারনে কাজ কম হলেও ঈদের আগে বেশি আয়ের জন্য অধিক সময় পরিশ্রম করছে শ্রমিকরা। কিন্তু তাঁত মালিকরা হাটে কাপড় বিক্রি করতে যেমন মজুরি দিতে পারছে না তেমনি কাজও দিতে পারছে না। এ অবস্থায় শ্রমিকরা মহাসংকটে পড়েছে শ্রমিকরা।
তাঁত শ্রমিক আলমাস, আব্দুল হাদি ও আবুল হোসেন জানান, পরিবার পরিজন নিয়ে একটু ভালভাবে ঈদ করতে বেশি পরিশ্রম করছি। কিন্তু মহাজনরা কাপড় বিক্রি করতে না পারায় বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় ঈদতো দূরের কথা, ডাল-ভাত খাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে। শ্রমিকরা আক্ষেপ করে বলেন, করোনার কারনে বহু মানুষ সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু তাঁত শ্রমিকদের দিকে একটু নজরও দেয়নি। মনে হয় আমরা দেশের নাগরিক নই।তাঁত মালিক নুরুল ইসলাম, ইয়াসিন ও কাওসার বলছেন, ঈদের আগে কাপড় উৎপাদন করে সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু করোনায় লকডাউনে হাট-বাজার বন্ধ এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাটে পাইকার আসছে না। কাপড়ও বিক্রি করতে পারছি না। শ্রমিকদেরও বেতন দিতে পারছি না। মহাজনদের ঋণও পরিশোধ করতে পারছি না। এছাড়াও তাঁতের উপকরন রং-সুতার দাম বাড়লেও কাপড়ের দাম বাড়ছে না। এতে তাঁতীরা ঋণগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। অনেক তাঁতী ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পেলে তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে মনে করছেন মালিকরা।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ সুর্য্য জানান, করোনা মহামারী বন্যায় তাঁতীরাও ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছে। এ অবস্থায় শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে তাঁত মালিকদের কম সুদে বা ২% সুদে অর্থ সহায়তার পাশাপাশি শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে জন্য চেম্বারের পক্ষ সরকারে কাছে আবেদন করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত