কেউ ভয়েস আর্টিস্ট, কেউ শিক্ষক, ব্যবসায়ী কিংবা ছাত্র। তারা নিজেদের খরচে দেশব্যাপী পরিবেশ সুরক্ষায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। দশ বছর ধরে কুমিল্লার এক দল উদ্যোমী যুবক পরিবেশ নিয়ে তারা কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে। এপর্যন্ত তারা পয়তাল্লিশটি জেলায় প্রচারণা কার্যক্রম চালান। বিশেষ করে পর্যটন এলাকায়। এছাড়া তারা সড়ক ও মহাসড়ক পরিস্কার নিয়ে কাজ করছেন।
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এস এম মিজান জানান, বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, হাসপাতাল, কলকারখানা, পোল্ট্রি ফার্ম, বেকারি, হাট-বাজার, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বর্জ্য-আবর্জনা, অপচনশীল পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, হাঁস- মুরগী এবং গরু ছাগলের নাড়িভুড়ি, ক্ষতিকারক কেমিক্যাল, রাসায়নিক দ্রব্য সবই ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের দুইপাশে ও সড়কদ্বীপে। এতে করে একদিকে নষ্ট হচ্ছে মহাসড়কের সৌন্দর্য, অন্যদিকে পরিবেশে দূষণ হচ্ছে।
সাইনবোর্ড মহাসড়ক থেকে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে আমাদের প্রচারণা চলমান রয়েছে। এছাড়া কাঁচপুর মহাসড়ক থেকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালানো। মেঘনা ব্রিজের টোল প্লাজা এলাকায় ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধের আহবান। ভাটেরচর, ভবেরচর মহাসড়ক থেকে ময়লা আবর্জনা সরিয়ে ফেলতে উদ্বুদ্ধকরণ। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকা, তালতলী ও গৌরীপুর মহাসড়ক থেকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে বালি ফেলতে উদ্বুদ্ধকরণ। রায়পুর বাসস্ট্যান্ড ও ইলিয়টগঞ্জ মহাসড়ক থেকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে অন্যত্র ময়লা ফেলতে পরামর্শ প্রদান। মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে বাজার অংশে মহাসড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা। চান্দিনা বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে পাট গবেষণা ইনিস্টিউটের সামনের মহাসড়কে ও পশ্চিম পাশে বেলাশ্বর পালকী সিনেমা হল এলাকায় ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে বালি ফেলায় উদ্বুদ্ধকরণ।
নিমসার সবজি বাজারের পশ্চিম পাশে ও পূর্ব পাশে এবং সড়কদ্বীপে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালানো। কাবিলা ঈদগাহের সামনের মহাসড়ক থেকে এবং ক্যান্টনমেন্টের নাজিরাবাজারে মহাসড়কের উত্তর পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে ব্যাপক তৎপরতা চলমান। আমতলী মহাসড়ক থেকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে ফেলতে উদ্বুদ্ধকরণ। আলেখারচর মহাসড়ক থেকে আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে ফেলতে উদ্বুদ্ধকরণ চলমান রয়েছে। সদর দক্ষিণ উপজেলার হোটেল নুরজাহান ও পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২এর সামনে মহাসড়ক থেকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে ফেলতে উদ্বুদ্ধকরণ অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়াও দেশের প্রধান সড়ক মহাসড়ক সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দীর্ঘ সময়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের প্রচেষ্টায় কিছু সফলতাও রয়েছে। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় ময়লার ভাগাড় সরিয়ে ফুলবাগান করা হয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দনিয়া, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগাং রোড পর্যন্ত দুইপাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে নার্সারি ও ফুল বাগান করতে উদ্বুদ্ধকরণ।
ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মাজেদ চৌধুরী বলেন, এখন একটা অস্থির সময় চলছে। প্রায় সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তার মধ্যে মানুষ ও দেশের কল্যাণে তরুণদের পরিচ্ছন্নতার আন্দোলন ব্যতিক্রম। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে পরিবেশ দূষণ কমাতে হবে।
ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মতিন সৈকত বলেন, নিত্যদিনের পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল অপচনশীল দ্রব্যাদি যত্রতত্র ভাবে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়ার কারণে আজ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। নিজেরাই নিজেদের পরিবেশ ক্ষতির জন্য দায়ী। পরিবেশ সুরক্ষায় যুবকরা দেশের প্রতিটি সড়ক মহাসড়কে এই আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল