বরিশাল মহানগর বিএনপি’র মধ্যে ‘আলাদা বিএনপি’র তৎপরতা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ ইমরান সাহেল প্রিন্স সাক্ষরিত এক চিঠিতে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রিন্স সাক্ষরিত চিঠিটি দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের কাছে প্রেরন করা হয়। বিএনপি’র বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলের মধ্যে কেউ ‘শৃংখলা ভঙ্গ’ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে সর্বোচ্চ কমান্ড। দলের সর্বোচ্চ কমান্ড ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটিও হতে পারে বলে শিরিন জানান।
দলের কেন্দ্রিয় কমিটির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান অভিযোগ তদন্ত করবেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দুই জন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তাকে সহযোগীতা করবেন।
সর্বোচ্চ কমান্ড বরিশাল মহানগর বিএনপি’র মধ্যে ‘দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী অপতৎপরতার’ অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকগন তদন্তকারী নেতাকে সহযোগীতা করবেন। যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দলের সর্বোচ্চ ফোরামে জমা দেয়া হবে।
বরিশাল মহানগর বিএনপি’র বর্তমান নেতৃত্বকে পাশ কাটিয়ে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে গত ৩০ মে বরিশাল প্রেসক্লাবের হলরুমে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন দলের মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বরিশালে উপস্থিত থাকলেও তাদের পাশ কাটিয়ে সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে এবং নেতৃত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। মনিরুজ্জামান জাতীয় পার্টির দলত্যাগী নেতা। ওই সভায় বিএনপি’র বিগত দিনে দলের আন্দোলন সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় মহানগর কমিটির পদবীধারী কয়েকজন নেতাসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১২ জুন বিকেলে নগরীর আমানতগঞ্জ পাওয়ার হাউজ জামে মসজিদে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৪, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র ব্যানারে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন মনিরুজ্জামান ফারুক। পরদিন ১৩ জুন ওই ৪টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাওয়ার হাউজ মসজিদে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার দায়িত্ব অস্বীকার করে। একই সাথে ওয়ার্ড বিএনপি’র ব্যানারে অন্য কারোর সভা আয়োজনের নিন্দা এবং এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
মনিরুজ্জামান ফারুক এবং তার সঙ্গীয় নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের এহেন কর্মকাণ্ড দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল বলে মনে করে মহানগর বিএনপি। জুনের প্রথমভাগে মহানগর বিএনপি সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন জিয়া সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক অভিযোগনামা কেন্দ্রে প্রেরন করা হয়।
এ ব্যাপারে জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন, গত এক যুগ ধরে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন করেছে। আন্দোলনে করতে গিয়ে অনেক নেতা গুম-খুন এবং হামলা-মামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দলের আন্দোলনসহ নিয়মিত কর্মসূচীতে অনুপস্থিত কিছু জনবিচ্ছিন্ন নেতা মহানগর বিএনপি’র মধ্যে ‘আলাদা বিএনপি’ করার অপচেস্টা করছে। বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। দলের কর্মসূচীতে সক্রিয় না থেকে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপি’র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, মজিবর রহমান সরোয়ার যোগ্য নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। এ কারণে অনেক নেতাকর্মী সভাপতির পাশ থেকে সরে গেছে। অভিমানী নেতাকর্মীদের আহ্বানে সারা দিয়ে তিনি তাদের একটি সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। এতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোন বিষয় নেই বলে তিনি দাবী করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন