বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের মধ্যে অতিবৃষ্টিতে ৮ দিন ধরে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বীজ ধান পেয়েছেন। ১১ হাজার ২৯০ জন চাষির রোপা আমন ধানসহ ৭৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্টের বিষয়ে গত শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কৃষি বিভাগ।
এরপর উপজেলা কৃষি বিভাগ ডিলারের মাধ্যমে গত দুইদিনে চার মেট্রিক টন বীজ ধান আনার সাথে সাথেই তা শেষ হয়ে যায়। তবে বীজ পেয়ে চাষিরা খুশি হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল বলে তারা জানান। একারণে অনেক চাষি বীজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
শরণখোলা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শরণখোলায় মোট ১১ হাজার ২৯০ জন চাষির মাধ্যমে এবার ৯ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআর-১১, বিআর-৫২ ও বিআর-২২ জাতের ধান চাষের জন্য ৭৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। সম্প্রতি অতিবর্ষণের জলাবদ্ধতায় ৫০ ভাগ বীজতলা পঁচে নষ্ট হয়েছে।
কিন্তু পুনরায় চাষের জন্য ডিলারদের কাছে বীজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে চাষিরা। এনিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবর ছাপা হলে বীজ সংগ্রহের তৎপরতা শুরু করে কৃষি বিভাগ। এরপর উপজেলার রায়েন্দা বাজারের ডিলার মেসার্স সরোয়ার এন্টার প্রাইজের মাধ্যমে রবিবার দুই মেট্রিক টন এবং সোমবার দুই মেট্রিক টন বিআর-৭১ বীজ ধান কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়।
মেসার্স সরোয়ার এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সরোয়ার হোসেন জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় সাতক্ষীরা ও যশোর থেকে বীজ ধান সংগ্রহ করে নির্ধারিত মূল্যে চাষিদের মধ্যে সরবারহ করা হচ্ছে। তবে চাষিদের আরো চাহিদা রয়েছে।
সোমবার সকালে বীজ ধান নিতে আসা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের জামাল মৃধা জানান, তিনি এবার চার মন ধানের বীজতলা করেছিলেন। কিন্তু অতি বৃষ্টিতে তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যে বীজ দেওয়া হচ্ছে, তা থেকে তার চাহিদা পূরণ হবে না।
রাজৈর গ্রামের রুস্তুম হাওলাদার জানান, অতিবৃষ্টিতে তার এক মণ ধানের তৈরি করা বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু এখন যে বীজ পেয়েছেন তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হবে না। এসময় কদমতলা গ্রামের এমাদুল হক গাজী ও সিদ্দিক হাওলাদার, কাদের খান, বাচ্ছু হাওলাদার, খাদা গ্রামের রুস্তুম গাজী বীজ ধান না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান।
বীজ সরবারহের সময় উপস্থিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ মো. আলাউদ্দিন ও মো. হাসিবুল ইসলাম মনি বলেন, চাষের মৌসুম শেষ পর্যায়ে। তাই দ্রুত বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে।
শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, কৃষকদের কথা চিন্তা করে অনেক ঝুঁকি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এই বীজ সংগ্রহ করতে হয়েছে। এছাড়া চাষিদের মধ্যে বীজ সুষম বন্টনের জন্য ডিলারের কাছে দুইজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন। আশা কারা যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯০ ভাগ চাষি উপকৃত হবেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই