দীর্ঘ অপেক্ষার পর আবারও আগামী ১২ আগস্ট থেকে চালু হচ্ছে বগুড়া-জামালপুর যমুনা নদীর নৌপথ। প্রথম দিকে ফেরি চলাচলের সিদ্ধান্ত হলেও পরে সেটি সি ট্রাক (ছোট ফেরি) চলাচল করবে। নৌপথটি চালু হলে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা পথের দূরত্ব কমবে ৮০ কিলোমিটার।
বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান জানান, আগামী ১২ আগস্ট নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উদ্বোধনের মধ্য দিয় দুই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মানুষ এবং মাঝারি যানবাহন নিয়ে সি ট্রাক চালু হলেও ভবিষ্যতে ভারি ফেরি সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই নদীর দুই প্রান্তে আধুনিক টার্মিনাল, সড়ক প্রশস্থকরণ, নদী ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ১৯১২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে জামালপুরের দেওয়াগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট চালু হয়। তখন মানুষ নৌকায় মালপত্র নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতো ঢাকায়। এরপর ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ থেকে জামালপুরের দেওয়াগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট পর্যন্ত নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
সেসময় এই নৌপথে উত্তরাঞ্চলের মানুষ পূর্বাঞ্চল, রাজধানী ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। এই নৌপথে ছিল মানুষ যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এবং ফেরির লাইন ছিল ১৩টি। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত প্রধান মাধ্যমই ছিল ফেরি সার্ভিস। এভাবে চলতে থাকার পর ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় যমুনা নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে যায়। নদীপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ের দিকে ভাঙতে থাকে।
লোকালয়ে ভাঙনের ফলে নদীতে পলি পড়ে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। নাব্যতা সংকটে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে গাইবান্ধার বোনারপাড়ার বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অব্যাহত ছিল। বগুড়ার সান্তাহার থেকে বোনারপাড়া হয়েও ট্রেনের যাত্রীরা এই ঘাট পারাপার হয়ে ঢাকায় চলে যেত।
১৯৯৮ সালের জুন মাসে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর বলাসিঘাট দিয়ে প্রথমে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পরে মালবাহী ওয়াগন পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে যমুনা নদী পাড়ের বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালীতলা ও মথুরাপাড়া নৌঘাট দিয়ে অপর পাড়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও কাজলাঘাট হয়ে মানুষের চলাচল আজো আছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌঘাটের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। অথচ সড়কপথে মাদারগঞ্জ যেতে হলে সারিয়াকান্দি থেকে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জেলা শহর বগুড়ায় যেতে হবে। এরপর বগুড়া থেকে সড়কপথে সিরাজগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে টাঙ্গাইল জেলা হয়ে জামালপুর যেতে হবে। এ পথ পাড়ি দিতে বাসে প্রায় ৫ ঘণ্টা এবং ১৭০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে।
ফলে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ জেলায় যোগাযোগ করতে নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে চলাচলকারীদের একদিকে সময় বেশি অপচয় হচ্ছে, অপরদিকে দিতে হচ্ছে অধিক ভাড়া।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌপথে ফেরি চালুর জন্য ফেরিঘাট নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, নাব্যতা ফেরাতে নদী খননসহ নদী সংস্কার ও উন্নয়নকাজে প্রকল্প গ্রহণের প্রাক-সম্ভ্যবতা যাচাইয়ে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল গত ২৬ মে সারিয়াকান্দি ও মাদারগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল ফেরি চালুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন।
বিআইডব্লিউটি-এর পরিচালক বাণিজ্যিক এ এস এম আশিকুর রহমান জানান, ফেরি সার্ভিস না, প্রথমে আমরা সি-ট্রাক চালু করা হবে। তারপর ৬ মাস পর ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই