২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:২৮

শরণখোলায় ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ৪০

বাগেরহাট প্রতিনিধি

শরণখোলায় ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ৪০

ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ৪০।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। এসময় সাউথখালী ইউনিয়নে সদস্য পদে পরাজিত ৩ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।

সোমবার রাতে ইউপি নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত আহতদের মধ্যে ২০ জনকে শরণখোলা হাসপাতালে ও এক নারীসহ পাঁচজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

শরণখোলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিজয়ী ও পরাজিত ইউপি সদস্যের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত হামলায় কমপক্ষে আরো ১৫ জন আহত হয়ে বাড়িতে রয়েছেন। তারা প্রতিপক্ষের হাতে আবারও হামলার ভয়ে হাসপাতালে আসতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার রাজেশ্বর জিলবুনিয়া, দক্ষিণ সাউথখালী বগী, চালিতাবুনিয়া, বকুলতলা, দক্ষিণ রাজাপুর, গোলবুনিয়া ও লাকুড়তলা এলাকায় এসব হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব এলাকার মধ্যে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, চালিতাবুনিয়া ও বকুলতলায় উতপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সহিংসতা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

সাউথখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর চালিতাবুনিয়া ওয়ার্ডের বিজয়ী প্রার্থী জাহাঙ্গীর খলিফা জানান, ফলাফল ঘোষণার পর রাতে যে যার বাড়ি যাওয়ার পথে পরাজিত প্রার্থী জাফর তালুকদারের কর্মীরা তার কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ছয়জন আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত সাইফুল ইসলাম রুবেল (৪১) ও মনির খানকে (৩৫) খুলনা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা শরণখোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তবে জাফর তালুকদার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেম্বার জাহাঙ্গীর খলিফার লোকজনরাই আমার ৬-৭ জন কর্মীকে মেরে আহত করেছে। সুলতান হাওলাদারের হাত ভেঙে গেছে। কিন্তু তাদের ভয়ে হাসপাতালে নিতে পারছি না।

সাত নম্বর বগী ওয়ার্ডের পরাজতি প্রার্থী হানিফ মুন্সির অভিযোগ, বিজয়ী মেম্বার রিয়াদুল পঞ্চায়েত ও তার কর্মীদের ভয়ে তার কর্মীরা এক প্রকার ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের হামলায় আলী আজগর (৪৮) আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। তার কর্মী আবু সালেহর মাছের আড়ত ভাঙচুর করেছে রিয়াদুলের লোকেরা। তবে, রিয়াদুল পঞ্চায়েতের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

দুই নম্বর বকুলতলা ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম খান জানান, বিজয়ী দেলোয়ার হোসেন খলিলের লোকেরা তার তিন কর্মীকে মেরে আহত করেছে। এর মধ্যে রাজু মৃধাকে (২৪) খুলনা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তিন কর্মীর দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।

দোকানপাট ভাঙচুরের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে মেম্বার দেলোয়ার হোসেন খলিল বলেন, দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে আমার কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে।

কাওসার মেম্বরের কর্মী সমর্থকরা জানান, সকালে কবির খানের সমর্থকরা রামদা নিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে, তখন আমাদের মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত হয়। সাথে সাথে তাদের শরণখোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক খুলনা নিয়ে যেতে বলেন। চালিতা বুনিয়ার জাহাঙ্গীর মেম্বারের সমর্থকরা জানান, আমরা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মিছিল নিয়ে বেড়িবাঁধের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন অপর পক্ষের পরাজিত জাফর তালুকদারের কর্মীরা আমাদের উপর হামলা চালায়।

শরণখোলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল আফিসার (আরএমও) ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, এত সংখ্যক মারামারির রোগী আসছে, যাদের ট্রিটমেন্ট দিতে আমাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের খুলনায় পাঠানো হয়েছে।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান জানান, নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষের খবর শোনা গেছে। এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। রায়েন্দা ও সাউথখালী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা একটু ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় সেখানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর