কুড়িগ্রামে যখন অনেক আমন ধান খেতে সবুজ কিংবা সোনালী সমারোহ ঠিক তখনি আমনের শেষ মৌসুমে শেষে এসে কুড়িগ্রামে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। ধান খেত নষ্ট হয়ে পরিণত হয়েছে পুরো খড়ে। বাদামি গাছফড়িং ও মাজরা পোকাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে বেশ কিছু খেতে। অনেক খেত পরিণত হয়েছে গরুর খাবার খড়রুপে। আর এসব খেতের ধান গাছ গোখাদ্যের জন্যই কেটে নিচ্ছেন চাষীরা। এরকম মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কুড়িগ্রামের বেশ কিছু কৃষক।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, বিভিন্ন কীটনাশক ও ওষুধ প্রয়োগ করেও ধানের তারা এ প্রতিরোধ করতে পারেননি। এমনকি কৃষকরা অভিযোগ করেন, সমাধানে কোন সঠিক পরামর্শও পাওয়া যায়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় মোট ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার হেক্টর জমিতে পোকার আক্রমণ হয়। এছাড়া কিছু জমিতে খোলপঁচা রোগের প্রকোপ দেখা দেয়।
সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক সাইদুজ্জামান জানান, তার পুরো ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে পোকার আক্রমণে।তিনি এখন হতাশ চোখে কষ্টে রয়েছেন। পোকার আক্রমণ থেকে আমন খেত বাঁচাতে না পেরে তিনি এখন হতাশায় রয়েছেন। সাইদুজ্জামান বলেন, আমি ব্রি-৪৯জাতের ধান লাগিয়েছিলাম।জমিতে ধান লাগার পর থেকে চাষবাসে ও কৃষাণীসহ বিভিন্ন খরচ হয়েছে প্রায় ৪০হাজার টাকা। ধানের শীষ বের হওয়ার সময় বাদামী গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণে এক দিনেই খড়ে পরিণত হয় পুরো ধানখেত। কীটনাশক প্রয়োগ করার সময়টুকু পাইনি। পুরো জমিতে আর ২ মণ ধানও পাব কিনা সন্দেহ। তাছাড়া ধান গাছ খড়ে পরিণত হলেও তার সবটুকুও গোখাদ্যও হবেনা।ফলে এই খড় জমিতেই পঁচানো ছাড়া উপায় নেই।
তার অভিযোগ কৃষি বিভাগের কেউ তাকে কোন পরামর্শ দেননি। এ ব্যাপারে শিবরাম ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুর আলম জানান, ধান খেতে পোকার আক্রমণ যাতে না হয় সে ব্যাপারে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারপরেও যারা পরামর্শ মানেননি, তাদের জমিতে পোকার আক্রমণ হতে পারে। তিনি কৃষক সাইদুজ্জামানের জমির কোন তথ্য পাননি বলে জানান।
একই অবস্থা সদর উপজেলার শিবরাম, প্রতাপ ও মহেন্দ্র নারায়ণ, রাজারহাট উপজেলার দেবালয় ও ছিনাইসহ কয়েকটি এলাকায় মাজরা, বাদামী গাছ ফড়িংসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো: শামসুদ্দিন মিয়া জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।তাছাড়া আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় পোকা আক্রমণের অনুকূল পরিবেশ ছিল। তবে ধানখেতে কিছু পোকার আক্রমণ হলেও বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম