কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ডাকরা মজুমদার বাড়ি। ‘অন্ধের বাড়ি’ বলেই পরিচিত সবার কাছে। এখানে এক পরিবারেই তিনজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাদের খাবার জুটে অন্যদের সহায়তায়। অভাব অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
সরেজমিনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের অভাব ও যন্ত্রনার কথা। ওই গ্রামের ধন মিয়ার (৭০) ছেলে মৃত জাহাঙ্গীর মজুমদার। জাহাঙ্গীর জন্ম থেকেই অন্ধ ছিল। ধন মিয়ার আরও দুই সন্তান শাহাদাৎ মজুমদার (৩৪) ও জোৎসনা বেগমও (৪২) জন্মান্ধ।
জাহাঙ্গীর ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। জীবিত থাকা অবস্থায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ ব্যয় করেও পাননি একটি ভাতার কার্ড। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী কুলসুম আক্তার (৪৩) ও তার বৃদ্ধ বাবা এখন পর্যন্ত কোন সরকারি ভাতা পাচ্ছেন না। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে কোন রকম দিন অতিবাহিত করছেন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী। জাহাঙ্গীরের পৈতৃক সূত্রে ছয় শতক জায়গা থাকলেও ঘর উঠানোর সামর্থ নেই তার ছেলেদের।
জাহাঙ্গীরের বাবা ধন মিয়া জানান, আমার তিন সন্তান অন্ধ। অনেক কষ্টে তাদের বড় করেছি। সারা জীবন কষ্ট করার পর এখন বয়স হয়েছে কিন্তু কোন ধরনের সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছি না। সরকার আমাকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দিলে উপকার হবে।
তার স্ত্রী কুলসুম আক্তার জানান, আমার মাথা গোজার মতো কোন ঘর নেই। দেবরের ঘরে ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করি। যেকোন মূহর্তে উঠে যেতে হবে এখান থেকে। একটি মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত। সরকারি খরচে একটি ঘর তুলে দিলে ছেলে মেয়ে নিয়ে ভাল ভাবে থাকতে পারব।
ধন মিয়ার ছেলে শাহাদাৎ জানায়, চোখে দেখি না। অনেক কষ্টে চলাফেরা করি। আমি আর আমার বোন প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। ছেলেদের পড়াশোনা করাতে সব টাকা ব্যয় হয়ে যায়। আমার বোন স্বামী পরিত্যাক্তা।
জাহাঙ্গীরের প্রতিবেশি বেলাল হোসেন জানায়, ছোটবেলা থেকেই দেখছি এই পরিবারটি অনেক কষ্টে দিন যাপন করছে। সরকার ও এলাকার বৃত্তবান লোকেরা তাদের পাশে দাঁড়ালে তাদের কষ্ট কিছুটা কমবে বলে আশা করছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের পরিষদ থেকে তাদের মধ্যে দুইজনকে ভাতার ব্যবস্থা করেছি, বাকিদেরও ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম মনজুরুল হক বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান সাথে কথা বলে সরকারি ভাবে তাদের জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল