পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার শিকার হয়েছেন নৌকা মার্কায় চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী সাইদুর রহমান রুবেল মোল্লা ও তার কর্মী সমর্থকরা। রুবেলের বাড়িতে হামলার সময় হামলাকারীরা দুটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ঘরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্তঃসত্তা নারী রোমেনা আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে রুবেল ও তার সমর্থকরা অবরুদ্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামে নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে ২৬ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় ৬ জনকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরা হলো সাহেব আলী, রুবেল, তোতা মিয়া, শাহাবুদ্দিন, মোশারেফ মোল্লা ও আলাউদ্দিন। এদের মধ্যে সাহেব আলী ও রুবেলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদেরকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। আহত নারী রোমেনাকেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হচ্ছে ।
রুবেল মোল্লা জানান, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তার বাড়িতে পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহীন গাজি ও তার সমর্থক আবু কালাম গাজী, আরিফ গাজী, সাবু গাজী ও সুমন গাজীর নেতেৃত্বে দেড়শ থেকে ২০০শ জন দেশীয় অস্ত্রধারীরা হামলা চালিয়ে দুটি হাত বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় হামলাকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুকুর পাড়ে থাকা অন্তঃসত্তা নারী রোমেনা বেগম আহত হয়। হামলাকারীরা রুবেলের কল্লা কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবে এবং গবাদি পশু, ঘেরের মাছ লুট করে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। গতকালের (বৃহস্পতিবার) নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) ঘোড়া মার্কার হাবিব মোল্লা ও আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস মার্কার শাহিন গাজীর দেড়শ থেকে ২০০ শর মত সমর্থক জোটবদ্ধ হয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়।
তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার, গলাচিপা থানার ওসি ও স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশকে অবহিত করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা চলে যায়। এর আগে একই গ্রুপ সকাল নয়টা থেকে সাড়ে নয়টায় নির্বাচনে নৌকার সমর্থন করায় হাজিরহাট বাজারে ৪ সমর্থক ইউপি সদস্য ভূট্টো বেপারী, সাহেব আলী, তোতা মিয়া ও হারুনকে মারধর করেছে। শুক্রবারের বাজারে নৌকার বেশ কয়েকজন কর্মীর দোকানে তালা মেরে বন্ধ করে দিয়েছে। এদের মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল কাজী ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনের দোকানে তালা মারার পাশাপাশি তাদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চরকাজলের নৌকার কর্মী সমর্থকরা এখন আতঙ্কে রয়েছে।
এ ব্যাপারে চরকাজলের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ও গলাচিপা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমার বাবা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এসেছিল। কিন্তু এ হামলার ঘটনা আমরা কিছুই জানি না। তবে যারাই এ কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে জানার জন্য আওয়ামী লীগের পরাজিত বিদ্রোহী আনারস মার্কার প্রার্থী মো. শাহিন গাজীর মোবাইল নম্বরে কল করলে তা বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, আমরা বর্তমানে চরকাজল রয়েছি। পরিস্থিতি কিছু উত্তপ্ত ছিল। রুবেল মোল্লার বাড়ি পরিদর্শন করেছি। এখন পরিবেশ শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ