অন্তরঙ্গ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম লিটনের বহিষ্কার চায় রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। এছাড়া লিটন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাবেক যুবদলের সহ-সভাপতিও ছিলেন বলে দাবি তাদের।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবর স্থানীয় আওয়ামী লীগের সকল ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্পাদকদের স্বাক্ষরিত লিখিত এক আবেদনে বহিষ্কারের এ দাবি করা হয়েছে। এ আবেদনে 'সিআইপি' লিটনের বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন তারা।
অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় নিজস্ব লোক দিয়ে ভিডিও ধারণ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার মতো গুরুতর অপকর্মে লিপ্ত থেকে সিআইপি লিটন দলীয় ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছেন বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ কারণে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য তাকে দ্রুত বহিষ্কার করার জন্য এ আবেদন জমা দেন দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতারা।
সিআইপি লিটন গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি পদে থেকে এমন কর্মকাণ্ডে সংগঠনের ভাবমূর্তি দেশে ও বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ণ করেছে বলে আবেদনকারিরা মনে করেন। সরকারের সিআইপি পদকপ্রাপ্ত একজন রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে দেশের মানুষ এমনটা আশা করেন না। তার দৃশ্যমান দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন এলাকাবাসী। এছাড়াও এত বড় অপকর্মের সাথে জড়িত ব্যক্তি কিভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হলেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তৃণমূল আওয়াসী লীগ নেতৃবৃন্দ।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়া হায়দার খান লিটন বলেন, ভিডিওটি দেশের বাইরের হওয়ায় ভিকটিমের পক্ষ থেকে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। কারও অপকর্মের দায়িত্ব দল নেবে না। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিআইপি লিটনকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়ার কথা জানালেও দায়িত্বশীল নেতারা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ মুখ খোলেননি।
জানা যায়, রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এই নেতার সাথে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও সম্প্রতি ডিজিটাল মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে আপত্তিকর এ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে দলীয় কর্মী সমার্থকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে বইছে সমালোচনার ঝড়। এ নিয়ে উপজেলাব্যাপী পোষ্টার লিফলেট টানানো হয়েছে।
সর্বশেষ বিষয়টি নিয়ে সিআইপি লিটনের গ্রামের বাড়ি উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাক্রমে সিআইপি লিটনের বড় ভাই ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন তার প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য মো. ফারুক মোল্লাকে ৩১ জানুয়ারী শুক্রবার হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করায় আহত ফারুক মোল্লা বরিশাল শেবাচিমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ হাতুরি পেটার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি এখনো। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকদের হয়রানির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দপ্তরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সিআইপি লিটন উপজেলার পুটিয়াখালী এলাকার মোজাম্মেল হকের ৩য় পুত্র ও গালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া পারভেজ’র ছোট ভগ্নিপতি। তিনি জোট সরকারের আমলে উপজেলা যুবদলের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে সরকার দলীয় পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক কক্সবাজার বিমানবন্দরের সমুদ্রবক্ষে সম্প্রসারিত রানওয়ের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প কাজসহ রেলপথ অধিদপ্তরের হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনাবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে (সিআইপি এনবিআর) ও বাণিজ্যিক মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অধিদপ্তর কর্তৃক কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে তিনি সিআইপি মর্যাদা লাভ করেন। রাজধানীর মতিঝিল এলাকার নাহার ম্যানসন এর ৫ম তলায় অবস্থিত লিটন ওয়ার্ল্ড লিংক এর মালিক তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম লিটনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তার বড় ভাই ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, 'রাজনীতিতে আগাইয়া গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারে এমন আগাম সংবাদে তার বিরোধী পক্ষ বর্তমান এমপি সাহেব, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির, ভাইস চেয়ারম্যান আফরেজা আক্তার লাইজুর সমর্থকরা এসব ছড়াচ্ছেন।'
বিডি প্রতিদিন/হিমেল