টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের আল আমীন (৪০) নামে এক সন্তানের জনক বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। বিষপানের আগে তার ছোট ভাই মাহমুদের কাছে আত্মহত্যার কারণ জানিয়ে একটি চিরকুট রেখে যান। চিরকুটে তিনি মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে এ পথ বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
আল আমীন ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল খানের বড় ছেলে। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে আমীন বিষপান করেন। বিষপানের পর প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিনই তিনি মারা যান।
আল আমীন চিরকুটে লিখেছিলেন, ‘ভাই আমার জীবন আর চালাই নিতে পারছিনারে ভাই। প্রতিটি মূহুর্ত যন্ত্রণার। মাহমুদ, অনেক ভালোবাসি ভাই তোকে। আমাকে মাফ করে দিস। আমার সংসারটা শিলার বাবা, মা আর ওর ভাই নাহিদ নষ্ট করে দিছে। আমার কলিজা টুকরাকেও নিয়ে গেছে ওরা। ভাই, প্রতিদিনের এই যন্ত্রণা কষ্ট থেকে এটা ছাড়া উপায় ছিল না। ভাই আমার অসহায়ত্ব আর চোখের পানিও ওদের কাছে হাসি তামাশার মনে হয়েছে। ভাই বাবুকে দেখে রাখিস। আর পারলাম না ভাই। একটু একটু করে মরার চেয়ে একেবারেই মরে যাওয়া ভালো। তাও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব। আমার আব্বা মাকে মাফ করে দিতে বইলো ভাই। আল আমীন ১৭/২/২২।’
আল আমীনের চাচা আবুল খায়ের খান জানান, আল আমীনের সঙ্গে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে শিলার বিয়ের পর তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান হয়। কিন্তু সম্প্রতি আল আমীনের সাথে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের সময় দুই বছরের ছেলে আশরাফুলকে স্ত্রী (শিলা) নিয়ে যায়। এ কারণে আমীন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এ সময় ফেসবুকে দেওয়া সুইসাইড নোটটি আল আমীনের বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
এ বিষয়ে আল আমীনের শ্বশুর ইউসুফ আলী বলেন, আমার মেয়ের জামাই ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত শিলাকে অত্যাচার করতো। অত্যাচার সইতে না পেরে বছর দুই আগেও একবার চলে এসেছিলো শিলা। আমি ও আমার আত্মীয় স্বজন বুঝিয়ে তাকে আল আমীনদের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে আল আমীনের বাবা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। মেয়ের সুখের কথা ভেবে আমি এক লক্ষ টাকা পাঠাই। তারপরও তারা আমার মেয়েকে অত্যাচার করেছে। দেড় মাস আগে এক রাতে আল আমীন আমার মেয়েকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে। সহ্য করতে না পেরে মেয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসে। আমি তাকে স্বামীর বাড়িতে যেতে বললেও মেয়ে আর যাবে না বলে জানায়। আর আমি যদি জোর করে তাকে পাঠাই তা হলে নিজেই নিজের ক্ষতি করবে। তাই বাবা হিসেবে আমি আর সেখানে পাঠাতে পারিনি।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি আত্মহত্যা। লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। আর এখন পর্যন্ত কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল