বগুড়ায় দুই নৈশ প্রহরীকে খুনের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। সেই সাথে ৭২ ঘন্টার মধ্যে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়। চুরির বিষয় জেনে যাওয়ায় এই জোড়া খুন করা হয়। গ্রেফতার হওয়া তিনজনই হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন বগুড়া সদর উপজেলার সরলপুরের জব্বার আলীর ছেলে আব্দুল হান্নান ও শিবগঞ্জ উপজেলার সাগরকান্দি গ্রামের হাসু প্রমাণিকের ছেলে শামছুল হক। তারা গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আলী হায়দার চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সরাফত ইসলাম, বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম রেজা, ওসি ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ।
এর আগে শনিবার ঢাকা গাজীপুর ও বগুড়ায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রডসহ তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার বিকেলে বগুড়া ফুলবাড়ী এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীর মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজের বর্জ্য জল অপসারণের ট্যাংক থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তারা মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজের নৈশ প্রহরী ছিলেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চকলোকমান এলাকার হোসাইন বিন মিল্লাত ওরফে নিনজা (৩৪)। সে মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজের পিকআপ চালক। অন্য দুজন হলেন সদরের বারুলী তালপট্টি এলাকার সুমন ব্যাপারী (২৭) ও মো. রাহাত মিয়া (২১)। এদের মধ্যে রাহাত পিকআপ চালক মিল্লাতের সহকারী। সুমনকে গাজীপুর ও বাকি দুজনকে বগুড়া সদর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জেলা পুলিশ জানায়, পিকআপ চালক মিল্লাত ও তার সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে বিভিন্ন সময়ে মালামাল চুরি করে বাহিরে বিক্রি করেন। নিহত দুই নৈশ প্রহরী তাদের চুরির বিষয়টি জেনে যান এবং এনিয়ে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। ফলে দুই নৈশ প্রহরী মালিককে বিষয়টি জানিয়ে দিবে এমন আশঙ্কা থেকে তাদেরকে খুন করা হয়।
মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজের অন্যতম পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান জানান, হান্নান ও শামছুল নিখোঁজ হওয়ার পর ঐদিনই হান্নানের ফোন থেকে তার কাছে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়। সেখানে লেখা ছিল নিখোঁজ দুইজনের খোঁজ পেতে হলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে লালমনিরহাট জেলায় যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শুক্রবার সকালে আবারো হান্নানের মুঠোফোন থেকে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয় এবং বলা হয় সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। এ হুমকি পেয়ে কারখানার চারপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। এক পর্যায়ে বর্জ্য অপসারণের ট্যাংক থেকে হান্নান ও শামছুলের লাশ পাওয়া যায়। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
নিখোঁজ দুই নৈশ প্রহরীর লাশ উদ্ধারের পর থেকে জড়িতদের ধরতে মাঠে নামে পুলিশ। এবং তিনজনকে গ্রেফতার ও হত্যার কারণ উদঘাটন করে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক কর্মচারী সুমন ব্যাপারী জোড়া হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনিসহ ওই কারখানার পিকআপের চালক হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা ও সহকারী (হেলপার) রাহাত গত বুধবার বগুড়ার সাতমাথা এলাকার শহীদ খোকন পার্কে এই হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক বৃহস্পতিবার ভোরে তারা একত্র হয়ে কারখানায় প্রবেশ করেন। প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ডেলিভারি থাকায় কারখানায় প্রবেশ করতে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। হত্যাকার সফল হতে তাদের সঙ্গে আরও দুজন যোগ দেন।
পুলিশ আরো জানায়, পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক প্রথমে কৌশলে নৈশ প্রহরী আব্দুল হান্নানকে কারখানার বর্জ্য জল অপসারণের ট্যাংকের কাছে নিয়ে যান তারা। সেখানে পেছন থেকে রড দিয়ে হান্নানের মাথায় আঘাত করা হয়। এতে হান্নান ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে তার মৃতদেহ বর্জ্য জল অপসারণ ট্যাংকে ফেলা হয়। পরে একই কৌশলে আরেক নৈশ প্রহরী শামছুলকে হত্যা করে ওই ট্যাংকেই ফেলা হয় তার মৃতদেহ। পরে হত্যাকারীরা নিহত হান্নানের মোবাইল ফোন হেফাজতে নেন। পরবর্তীতে সুমন ব্যাপরীকে ফোন দিয়ে বলা হয় গাজীপুরে চলে যেতে বলেন পিকআপ চালক হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা। এবং পরিকল্পনা মোতাবেক নিহত হান্নানের মুঠোফোন ব্যবহার করে দুই নৈশ প্রহরীর মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা চেয়ে কারখানার পরিচালককে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়। দুজনকে খুন করে এভাবে অপহরণ নাটক সাজান তারা।
বিডি প্রতিদিন/এএ