নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি নূর হোসেনের ভাইয়ের শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের নির্মাণাধীন কার্যালয় ভেঙ্গে দিয়েছে পুলিশ।
দীর্ঘ ৮ বছর পর শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে আবারও চাঁদাবাজি শুরু করতে ৮ এপ্রিল রাতে হঠাৎ করে শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে শনিবার সকালে ৭ খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি নূর হোসনের ছোট ভাই একাধিক মামলার আসামি নুরুজ্জামান জজ মিয়া ওরফে ছোট মিয়া বিপুল সংখ্যক ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অফিস নির্মাণ করছিলো। এসময় খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, মাস্তানী ও অপকর্ম করতে দেওয়া হবে না। সাধারণ মানুষের প্রতি কোন জুমুল, অন্যায় পুলিশ করতে দিবে না। এটা পুলিশ সুপারের (এসপি) কঠোর নির্দেশ।
স্থানয়ীরা জানান, ২০১৪ সালে ৭ খুনের ঘটনার পর নূর হোসেনের নিয়ন্ত্রণাধীন শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের চাঁদাবাজিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় পুলিশ প্রশাসন। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ কার্যক্রম চালু করার জন্য তৎপরতা চালিয়ে ব্যর্থ হন নূর হোসেনের দোসররা। দীর্ঘ ৮ বছর থানা পুলিশ আন্তঃজেলার কার্যক্রম পরিচালনার কোন অনুমতি দেয়নি। ৮ বছর পর শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে আবারও চাঁদাবাজি শুরু করতে ৮ এপ্রিল রাতে হঠাৎ করে শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের একটি সাইনবোর্ড জুলিয়ে দিয়ে শনিবার (৯ এপ্রিল) সকালে ৭ খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি নূর হোসনের ছোট ভাই একাধিক মামলার আসামি নুরুজ্জামান জজ মিয়া ওরফে ছোট মিয়া বিপুল সংখ্যক ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অফিস নির্মাণ কাজ শুরু করে। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ ট্রাক চালক ও টান্সপোর্ট এজেন্সির সংশ্লিষ্টরা।
নূর হোসেন ছোট ভাই নুরুজ্জামান জজ ওরফে ছোট মিয়াকে সভাপতি ও নূর হোসেনের আরেক ক্যাডার আক্তার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন শিমরাইল ট্রাক টার্মিনাল শাখার নামে একটি কমিটি করা হয়েছে। এছাড়াও কমিটির কার্যকারী সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাত খুন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সানা উল্লা সানার ভাই জাকির হোসেন ও নূর হোসেনের যাত্রাপালা ও মাদকের নিয়ন্ত্রক ফরহাদ দেওয়ান। এই কমিটির মাধ্যমেই শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করার পায়তারা করেছেন নুরুজ্জামান জজ ওরফে ছোট মিয়া।
উল্লেখ্য, সাত খুন ঘটনার পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জের অপরাধের নিয়ন্ত্রক ছিল নূর হোসেন। আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কার্যালয়ে বসেই নূর হোসেন ট্রাক ও গণপরিবহন, ফুটপাতের হকার, রেস্টুরেন্ট, বালুমহাল জবরদখল, এমনকি শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকেও নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন তিনি। সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলে ট্রাকের হেলপার নূর হোসেন অবৈধপথে উপার্জন করে গডফাদার রূপে আবির্ভূত হন। এক সময়ে তার ‘সাম্রাজ্যে’ হাত বাড়ালেই মিলতো ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। পতিতালয় চালানো, জুয়ার আসর বসানো, যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য আয়োজনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করা নূর হোসেনের ছিল বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার।
এ বিষয়ে কথা হলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মশিউর রহমান বলেন, চাঁদাবাজি ও কোন অপকর্ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আন্তঃজেলা কার্যালয় নির্মাণের খবর পেয়ে দু’দফা পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, নারায়ণগঞ্জে কোন চাঁদাবাজির চেষ্টা করা হলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন