বগুড়া সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৭ গ্রামের ৮ হাজার এলাকাবাসী চান পাকা রাস্তা। রাস্তাটি নির্মাণ হলে এলাকাটির কৃষি ফসলের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কম হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ভোগান্তির অবসান হবে।
১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সারিয়াকান্দি উপজেলা। এ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ যমুনা নদীর গর্ভে বিলীন। ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে একাধিক পাকা রাস্তা রয়েছে। শুধুমাত্র চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত কোনো পাকা রাস্তা নির্মিত হয়নি। যমুনা নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করার কারণে এ ইউনিয়নের ৭টি গ্রামে বিশালাকার স্থায়ী জনপদের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বেশ কয়েকবছর ধরে উপজেলা সদরের সাথে সড়কপথে যোগাযোগ করছেন পথচারীরা। সড়ক পথটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪ হতে ৫ কিলোমিটার।
সড়কটিতে সুজাতপুর, চর শরুলিয়া, সুজালীপাড়া, শিমুলতাইড়, বিরামের পাঁচগাছি, চর চুকাইনগর, খাটেবাড়ী, নয়াপাড়া এবং শেরপুর গ্রামের ৮ হাজারের বেশি পথচারী যাতায়াত করেন। এ সড়কটি কাঁচা হওয়ার কারণে রাস্তাটির প্রায় সম্পূর্ণ অংশজুড়ে ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাটির ছোটবড় গর্ত এবং বালুমাটি দ্বারা নির্মিত হওয়ায় এ রাস্তা দিয়ে শুধুমাত্র ঘোড়ার গাড়ি, ট্রলি এবং মোটরসাইকেল যাতায়াত করে। রাস্তাটি পাকা হলে সকল প্রকার মেশিনচালিত যানবাহন চলাচল করতে পারবে। বৃষ্টির দিনে রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করতে যাত্রীরা নানাবিধ অসুবিধায় পড়েন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ ইউনিয়নে সর্বমোট ২৩৪০ হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। যেখানে মরিচ, ধান, পাট, গম ও ভুট্টাসহ প্রায় সকল ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়। এসব ফসলগুলো ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে নিয়ে বিক্রি করতে কৃষকদের পরিবহন খরচ খুবই বেশি হয়। ফলে ফসলে লাভের পরিমাণ খুবই কম হয়। রাস্তাটি পাকা হলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদী এলাকাবাসীর।
এ ইউনিয়নের আউচারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাকুল্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটশেরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আওচারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বওলাডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিমুলতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাশিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিরামের পাঁচগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব সুজাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চকরথিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাঙরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও করনজাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই কাঁচা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে নানাবিধ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
এ ইউনিয়নের রাস্তাটি সংলগ্ন ৭টি গ্রামে প্রায় ৫টি ছোটবড় বাজার রয়েছে। এসব বাজারগুলোতে উপজেলা সদর হতে পণ্য ক্রয় করে আনতে নানাবিধ সমস্যায় পড়েন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে পণ্যের ক্রয়মূল্যও বেশি পরে যায়।
এই ইউনিয়নে ১২ হাজার ধারণক্ষমতার একটি মুরগির খামার রয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা খারাপের জন্য ক্রমাগত লোকসানের ফলে খামারটি এখন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া এখানে বেশ কয়েকটি মহিষের বাথান এবং প্রায় প্রতি পরিবারেই গরু ছাগল রয়েছে। এসব খামারের পশুখাদ্য এবং দুধ সদরে পরিবহন করতে খামারিরা নানা ধরনের অসুবিধায় পড়েন। পরিবহন খরচও বেশি হয়।
উত্তর সুজালীপাড়া গ্রামের ফজল হক আমিন শেখ বলেন, এলাকার উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সে এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সংযোগ। গত বছর আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইছি। এখন রাস্তা পাকা হলে এলাকার উন্নয়ন হবে। বিরামের পাঁচগাছি গ্রামের কৃষক আবুল খাঁর ছেলে নূর নবী খাঁ বলেন, হামি প্রতি বছর মরিচের চাষ করি। এ বছরও ২৫ বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। পরিবহন ব্যবস্থা খারাপের জন্যে জমিতেই কমদামে সব মরিচ বিক্রি করেছি।
চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, রাস্তাটি পাকাকরণ এ ইউনিয়নের এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বগুড়া জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন দেওয়া হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য ইতিমধ্যেই প্রাক জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলে অতি দ্রুত রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ আমরা করতে পারব।
বিডি প্রতিদিন/এমআই