নীলফামারীর মুড়িপল্লীখ্যাত কোচপাড়া গ্রামের মানুষ কয়েক বছর আগেও মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে ঐ গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবার পেশা বদল করে উপার্জনের জন্য নিয়োজিত হয়েছেন বিভিন্ন কাজে।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের বটতলি-মাস্টারপাড়া-কোচপাড়া এলাকাগুলোতে এক সময় মুড়ি ভাজার ব্যস্ততা শুরু হলেও বর্তমানে এ দৃশ্য আর চোখে পড়ে না ঐ গ্রামে।
জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হতো এখানকার মুড়ি। ধর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের জানান, এক সময়ে শত শত মানুষ মুড়ি ভেজে বিক্রি করে সংসার চালাতো। তাদের হাতে ভাজা মুড়ির কদর ছিল মানুষের কাছে। এই মুড়ির স্বাদ ভিন্ন রকমের। কিন্তু অটোমেশিনের মুড়ি কমদামে পাওয়ায় কদর কমেছে কোচপাড়ার মানুষদের আর একই সঙ্গে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা। যার ফলে পেশা ছেড়েছেন অধিকাংশ মানুষ।
কোচপাড়া গিয়ে দেখা যায়- মাত্র তিনটি পরিবার এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন। এরমধ্যে মানিক রায়, বেনাট রায় ও সুবেধ রায় এখনও ধরে রেখেছেন মুড়ি উৎপাদন ও বিক্রি বাজারজাতের পুরোন পেশা।
মানিক রায় বলেন, চার বছর আগেও স্বাভাবিক দিনে ১০০ কেজির চাল ভেজে মুড়ি তৈরি করতাম আমরা। বিশেষ করে রমজান মাসে ১২৫ কেজি চালেরও মুড়ি প্রয়োজন হতো। প্রতিদিনের মুড়ি প্রতিদিনই বিক্রি হতো। এখন একবস্তা চালের মুড়ি (৫০ কেজি) বিক্রি করতে সময় লাগে এক সপ্তাহ।
সুবেধ রায় বলেন, অটোমেশিন হওয়ায় ওই মেশিনের মুড়ি সাইজে বড় হয়। দামেও কমে পাওয়া যায়। সেই কারণে ব্যবসায়ীরা মেশিনের মুড়ি কেনেন। যার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। আগে বস্তা প্রতি এক হাজার টাকা লাভ আসতো এখন তার অর্ধেকেও আসে না। কারণ দাম বেড়েছে আর খরচ বেশি হয় আমাদের মুড়ি ভাজতে।
এলাকার মহেন রায়ের স্ত্রী লালমনি রায় (৪৫) বলেন, রমজান মাস আসলে মধ্য রাতে উঠে মুড়ি ভাজার কাজ শুরু করতাম। পরিবারের পাঁচ ছয়জন এই কাজে জড়িত থাকতো।
ওই এলাকার অঞ্জনা রায় বলেন, এইতো কয়েক বছর আগে এলাকায় মুড়ির গন্ধ পেতো মানুষ। বাড়ি বাড়ি মুড়ি তৈরি হতো। পরিবারের সবাই এই কাজে জড়িত ছিলো। অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি ছিলো। এখন আর কেউ এই কাজ করেন না।
একই এলাকার তিলোবালা জানান, আমি নিজেও মুড়ি তৈরি করতাম। কাজের সহযোগীতার জন্য অন্যকে ডেকে আনতাম। স্বামীও এই কাজে জড়িত ছিলো। এখন দিনমজুরী করে। মুড়ি ভেজে সংসার চলে না বিধায় অন্য কাজে গেছে।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিসিক) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা বেগম বলেন, মুড়ি উৎপাদনের সাথে যারা জড়িত তাদের আমরা প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি। এখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে পারেন। আমাদের সাথে যোগাযোগ করে ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ নিয়ে আবারো ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ