নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাস ও একটি ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৭ জন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মহিষভাঙ্গা এলাকায় গাজী অটোরাইস মিলের সামনে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে রাজশাহীগামী একটি বাস ও ঢাকাগামী একটি বাস এবং একটি ট্রাকের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে একটি বাস রাজশাহী অভিমুখে যাচ্ছিল। বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের মহিষভাঙ্গা এলাকার গাজী অটোরাইস মিলের সামনে পৌঁছালে বাসটি সামনে থাকা অপর একটি বাসকে অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আরেকটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তখন একটি বাস ছিটকে গিয়ে গাজী অটোরাইস মিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। আরেকটি বাস মহাসড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কিছুটা সড়কের নিচে নেমে যায়।
এতে একটি বাসের ৪ যাত্রী ও আরেকটি বাসের ২ যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। উভয় বাসের অন্তত ২০ জন যাত্রী আহত হন। উভয় বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গেছে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বনপাড়া হাইওয়ে থানা, বড়াইগ্রাম থানা ও বনপাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আহত যাত্রীদের বনপাড়া, নাটোর ও রাজশাহীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুপুর ১২টার দিকে দুর্ঘটনায় আহত মোহনা আক্তার মিলি (২৬) নামে এক যাত্রীকে বনপাড়ার আমেনা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া গ্রামের রুহুল আমীনের স্ত্রী।
ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড়
ন্যাশনাল পরিবহনের যাত্রী আরইবির রাজশাহী বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (এসি) এনামুল হক বলেন, তিনি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন। বনপাড়ার গাজী অটোরাইসমিল ও পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশন অতিক্রম করার সময় তাদের বাসটি সামনে থাকা একটি বাসকে অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই যাত্রীরা ছড়িয়েছিটিয়ে যান। তখন একটি বাস গাজী অটোরাইস মিলের একটি ট্রাকের সঙ্গেও ধাক্কা খায়। ঘটনাস্থলে তিনি ছয়জনের মৃতদেহ দেখতে পান বলে জানান তিনি। তিনিসহ বহু যাত্রীকে তিনি আহত অবস্থায় দেখেছেন।
এক যাত্রী এনামুল হক (৪৭) ও আক্তারী খানম (৪১) দম্পতি বলেন, গাড়িটি অযথাই বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। অনেক যাত্রীর অনুরোধেও গতি কমাননি চালক। অবশেষে দুর্ঘটনায় পড়তে হলো। কেড়ে নিল ৭টি তাজা প্রাণ।
নিহতরা হলেন সিয়াম পরিবহনের যাত্রী নাটোর সদর থানার পাইকোরদল এলাকার প্রবাসী শাহজাহান মিয়ার ছেলে কাউছার রহমান (১৭), মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১৩) ও শ্যালক, নাটোর সদর থানার পাইকোরদল এলাকার মুক্তার হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন (৪৮) এবং ন্যাশনাল পরিবহনের যাত্রী নাটোরের লালপুর থানার ওয়ালিয়া এলাকার মোহনা আক্তার মিলি (২৬), মাগুড়া সদর থানার মিজানুর রহমান (৩০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার মশিউর রহমান (২৫) ও টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার বেক্সগুনিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল (২৬)।
হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। খবর পাওয়ামাত্র পুলিশ আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসাপাতালে পাঠিয়েছেন। সড়কে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে তারা কাজ করছেন বলে জানান।
খবর পেয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান, বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন, বড়াইগ্রাম থানার ওসি আবু সিদ্দিক ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেছেন।
এসময় জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা এবং আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতার ঘোষণা দেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ