ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের লোকনাথ উদ্যান (টেংকের পাড়) থেকে তাদের আটক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ।
আটক কিশোররা হলো- শহরের মধ্যপাড়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে জুম্মান উদ্দিন (১৫), ফুলবাড়িয়ার এ.কে.এম ফজলুল হকের ছেলে ফায়াজ ফারমিদ মোবিন (১৪), উত্তর পৈরতলার মো. সোহেল মিয়ার ছেলে মেরাজুল হক সৌরভ (১৭), মধ্যপাড়ার মুকুল পালের ছেলে সূর্য পাল (১৬), কাজীপাড়ার সুকুমার দাসের ছেলে ছানি দাস, পূর্ব পাইকপাড়ার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মো. রিপন (১৮), লোকনাথ উদ্যান (টেংকেরপাড়) এলাকার আবু ছায়েদের ছেলে মো. বাবুল (২০), খৈয়াসারের এমদাদুল হকের ছেলে আশরাফুল হক পায়েল (১৮), পশ্চিম মেড্ডা পীরবাড়ি এলাকার আলমগীর ভূঁইয়ার ছেলে আলমাস ভূঁইয়া (২০), কাজীপাড়ার তরুণ বণিকের ছেলে দিপানজন বণিক, কান্দিপাড়ার আনিসুর রহমানের ছেলে রোহান রহমান ওয়াছি, পশ্চিম পাইকপাড়ার নাসির আহমদ খানের ছেলে জাফল উল্লা খান, হালদার পাড়ার সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের ছেলে মো. সাহিদ হাসান, বিজয়নগর উপজেলার পত্তন গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল হাসনাত আসিফ, আখাউড়া উপজেলার হিরাপুর গ্রামের মাইনুল ইসলামের ছেলে মো. সিয়াম ভূঁইয়া (১৭), নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর গ্রামের ইন্দ্রজিৎ সরকারের ছেলে পাপন সরকার (১৭), একই উপজেলার গুনিয়াউক গ্রামের মো. জামিরুল ইসলাম ও নবীনগর উপজেলার খরিয়ালা গ্রামের আবদুল হেকিমের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত।
আটক কিশোরদের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৫ জন ছাত্রও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাশ শুরু ও ছুটির সময় কিশোর গ্যাংয়ে সদস্যরা হালদারপাড়ার সূর্যমুখী কিন্ডার গার্টেনের সামনের রাস্তা, কাজীপাড়ার সাবেরা সোবহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, হালদারপাড়া গভঃ গালর্স উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, মৌড়াইল অবকাশ এলাকার ফারুকী পার্কের সামনে, সরকারি মহিলা কলেজের হোস্টেলের সামনে, পাইকপাড়া আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, লোকনাথ উদ্যান (টেংকেরপাড়), ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আধুনিক মার্কেটের সামনেসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে স্কুলের ছাত্রীদের ইভটিজিং করে।
বিশেষ করে ফারুকী পার্ক ও লোকানাথ উদ্যানে (টেংকেরপাড়) কিশোর গ্যাংয়ের পদচারণা থাকে বেশি। শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ওই দুটি জায়গায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের ইভটিজিং করে। সুযোগ পেলে পথচারীদের ডেকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। গত ১৫ দিনে লোকনাথ উদ্যানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতিপক্ষের কিশোরদের মারধোরসহ বেশ কয়েকটি অপরাধ কর্মকাণ্ড করে। প্রায় ১ মাস আগে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এক কলেজ ছাত্রীকে মারধোর করে তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজনৈতিক নেতা এবং শহরের প্রভাবশালী পরিবারের বিধায় তাদেরকে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। তাই দিন দিন বাড়ছে তাদের দৌরাত্ম্য।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতায় আমরা আতঙ্কিত। কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা আরও জোরদার করার দাবি জানান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, ১৯ জন কিশোর অপরাধীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ড্রেস পরা। লোকনাথ উদ্যানে প্রায়ই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। তাদের অনেকের পকেটেই চাকু থাকে।
তিনি বলেন, স্কুলের প্রধান ও তাদের অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ