মা-বাবা কতো আপন তা বোঝার মতো বোধশক্তি নেই ময়মনসিংহের ত্রিশালে দুর্ঘটনার সময় রাস্তায় জন্ম নেওয়া কন্যা শিশুটির।
শনিবার যন্ত্রদানবের নিষ্ঠুর শিকারে বাবা-মা আর বড় বোনকে হারিয়ে পৃথিবীতে আসে সে। এরপরও কান্নাকাটি নেই, দিব্যি খাচ্ছে, হাসছে কন্যা। খেলতে খেলতে ঘুমিয়েও পড়ছে। তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য চেষ্টার কোনো কমতি রাখছেন না চিকিৎসকরা।
বর্তমানে শিশুটি ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, নিয়মিত বুকের দুধ খাচ্ছে। তার ডান হাতের দুই জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হলেও শঙ্কামুক্ত আছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সপ্তাহ দুয়েক লাগবে।
আজ রবিবার সকালে সরেজমিনে রায়মণি ফকির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পেছনে একসাথে নতুন তিনটি কবর। যেখানে চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না আক্তার ও মেয়ে সানজিদা। একসঙ্গে তিনজনকে হারিয়ে তাদের কবরের পাশে বসে অনবরত বিলাপ করছেন মা সুফিয়া আক্তার। আর দাদীর পাশে ছলছল চোখ নিয়ে বাবা-মা-বোনকে হারিয়ে জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির ১০ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে নিহতদের জানাজা শেষে সেখানেই দাফন করা হয়।
অথচ নতুন শিশুর আগমনে বাড়িটির গোটা আঙ্গিনায় থাকার কথা ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস। একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে সবকিছু, আনন্দের সময়টাকে পরিণত করেছে বিষাদে। এমন ঘটনায় শোকে স্তব্ধ শুধু রায়মণি গ্রামই নয় শোকের ছায়া নেমে পুরো ত্রিশাল উপজেলাজুড়ে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা নাড়া দিয়েছে গোটা দেশকে।
জানা যায়, নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ও মা সুফিয়া আক্তার দুইজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা জানান, জায়গা না থাকায় বাড়ির পাশেই বানানো হয়েছে কবরস্থান। থাকার ঘরটিও ভাঙা টিন আর মাটির তৈরি। দরিদ্র পরিবারে জাহাঙ্গীরই ছিল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকেসহ তিনজনকে একসঙ্গে হারিয়ে আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এখন নবজাতকসহ তিন সন্তানের ভবিষ্যতও অনেকটা অনিশ্চয়তার মুখে।
প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা আক্তারকে নিয়ে ত্রিশাল পৌর শহরে যান উপজেলার রায়মনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। সে সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ময়মনসিংহগামী পিয়াজ ভর্তি একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই জাহাঙ্গীর আলম, স্ত্রী রত্না আক্তার এবং ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা আক্তার মারা যায়। এ সময় ওই নারীর পেটে থাকা বাচ্চা চাপ খেয়ে সড়কেই প্রসব হয়।
এদিকে, শিশুটিকে অনেকেই দত্তক নেবার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্বজনরা দত্তক দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন