টানা ৩ মাস ১৭ দিন পর রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে মাছের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান। তাই কাপ্তাই হ্রদের জেলেরা মধ্যরাত থেকে শুরু করবে মাছ শিকার।
তাই আগে থেকে মাছ আহরণ,বাজারজাত করণ, পরিবহন ও বরফকল প্রস্তুত রেখেছে মৎস্যজীবীরা। প্রস্তুত করা হয়েছে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উন্নয়ন ও বিপনি কেন্দ্র অর্থাৎ ফিসারিঘাট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের একমাত্র মিঠা পানির মাছের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। রাঙামাটির মাছের চাহিদা মিটিয়ে এ মাছ রপ্তানি করা হয় দেশে-বিদেশে। এ মাছের উপর জীবন-জীবীকার নির্ভর প্রায় ২২ হাজার মৎসজীবী পরিবারের। তাই প্রতি বছর ৯ মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ চলমান থাকলেও তিন মাস বন্ধ রাখতে হয়। মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজননের বৃদ্ধি ও মা মাছ নিধন রোধের লক্ষ্যে। তিন মাসে চলমান থাকে পোনামাছ অবমুক্ত করণ। মাছের পোনা পর্যাপ্ত বড় হলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
চলতি বছরও গত ১ মে থেকে তিন মাসের জন্য রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিএফডিসি ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসক। কিন্তু গত জুলাই মাসে তিন মাসপূর্ণ হলেও শুরু করা যায়নি মাছ আহরণ। কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার মতো পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল আরও ১৭দিন। তাই ৩ মাস ১৭ দিন পর শুরু হচ্ছে আবারও কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার।
রাঙামাটি মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, গত তিন মাস ১৭ দিন একটা শঙ্কার মধ্যে ছিলাম। কারণ কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল না। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর একেবারে কম ছিল। যার কারণে তিন মাসের চেয়ে অধিক সময় মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু মাছ শিকার না করলে মৎস্যজীবীরা না খেয়ে মারা যাবে। ব্যবসা না থাকলে দেশের এমন ক্লান্তিকালে মানুষ কিভাবে চলবে।
একইভাবে শঙ্কা প্রকাশ করেন আরেক ব্যবসায়ী মো. আলী আকবর। তিনি বলেন, দেশের সব কিছুর দাম বৃদ্ধি। তাই জেলেদের দাতন (এক কালিন টাকা) হিসেবে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। একই সাথে পরিবহনে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। শ্রমিক কর্মচারীদেরও বেতন বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। মাছ আহরণ যদি বৃদ্ধি পাই তাহলে এ খরচ পুশিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। আর মাছ কম হলে আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পাল্লা ভাড়ি হতে পারে।
এরই মধ্যে জেলেদের কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলেছে বিএফডিসি। তবে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু নির্দেশনা।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উন্নয়ন ও বিপনি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার এম তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মাছ ধরা স্বাভাবিক হলেও অভয় আশ্রমগুলো সংরক্ষিত থাকবে আগের মতো। অভয় আশ্রমে মাছ ধরা যাবে না। একই সাথে পোনা মাছ নিধন করা যাবে না। জেলেদের এ বিষয়ে সর্তক করা হয়েছে। এছাড়া শুল্ক আদায়সহ অন্যান্য কাজগুলোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন