ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জেলার তিন উপজেলার নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। পানি নিষ্কাশনের জন্য ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিস্তা নদীর উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে করে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লহ্মীটারী, গজঘন্টা, মর্ণেয়া, গঙ্গাচড়া সদর, কাউনিয়ার পাঞ্জরভাঙ্গা, পীরগাছার শিবচর, হাগুড়িয়াসহ তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চরের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পান্দিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার হাত থেকে বাঁচতে গবাদী পশু-পাখি নিয়ে নদীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির কারণে চরাঞ্চলগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের আমনের ক্ষেত।
এদিকে, শুক্রবার উজানের ঢল কমে যাওয়ায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিকেল ৩টায় ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩৫ সে.মি। যা বিপৎসীমার ২৫ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি কমে আসলেও রংপুরের ৩ উপজেলায় মানুষের দুর্ভোগ কমেনি।
বিনবিনা চরের নুরুল ইসলাম বলেন, রাতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গবাদী পশু নিয়ে তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। খোলা আকাশের নিচে থাকায় রাতে বৃষ্টির পানিতে পুরো পরিবারের সদস্যরা ভিজে গিয়েছি। ঘর-বাড়ি পানি উঠেছে, খাবার নাই, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। আমরা চরম কষ্টে রয়েছি।
লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, গঙ্গাচড়া উপজেলার মধ্যে আমার ইউনিয়ন বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তার উজানের অংশ সিকিম ও গ্যাংটকে আবার মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের শংঙ্কা রয়েছে। এতে করে তিস্তা নদীর পানি পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তিস্তা নদীর তীরবর্তী উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বার্তা পৌঁছানো হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন