প্রতি বছরের ভাদ্র মাসের একাদশীতে নেচে-গেয়ে কারাম উৎসবে মেতে ওঠেন ঠাকুরগাঁওয়ের আদিবাসীরা। বিপদ থেকে মুক্তি, অতিবন্যা ও খরা থেকে বাঁচতে দেশ ও মানুষের মঙ্গল কামনায় ঐতিহ্যবাহী ও সামাজিক এই উৎসবটি পালন করেন তারা। কারাম বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে ঢাকের তালে নিজস্ব সংস্কৃতির রেশে তরুণ-তরুণী,কিশোর-কিশোরীরা নেচে গেয়ে মেতে উঠেন উৎসবে। আর গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী নৃত্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই।
জানা যায়, কারাম উৎসব উদযাপনের জন্য আদিবাসী (ওঁরাও) নর-নারী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পূজার প্রথম দিন উপোস থাকেন। উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন ওঁরাও নারীরা। সন্ধ্যায় মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনেন তারা। পরে তাঁরা একটি পূজার বেদী নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি পূজার বেদীতে রোপণ করা হয়।
এরপরেই সেখানে হাত পা দুলিয়ে নেচে গেয়ে উৎসবে মেতে উঠেন আদিবাসীরা। তরুণ-তরুণী,কিশোর-কিশোরীরা সহ সকল বয়সের মানুষেরাই অংশ নেয় সেই নৃত্যতে। এই উৎসবকে ঘিরে শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের সালন্দর ইউনিয়নের প্রতিবারেই পাঁচপীরডাঙ্গায় হয়ে থাকেন আদিবাসীদের এই নৃত্য। আর তাদের এই উৎসবে অংশ নেয় আশেপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ ভিড় করেন সেখানে। আদি সময় থেকে ওরাও আদিবাসীরা কারাম পূজাটি পালন করে আসছে ঠাকুরগাঁওয়ে। এ কারাম বৃক্ষকে পূজা করার মাধ্যমে তারা মনে করেন তাদের সকল বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। আর এই পূজার মাধ্যমে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে। ২০০৩ সাল থেকে ঠাকুরগাঁও জেলায় এই কারাম উৎসবটি পালন করে আসছেন আদিবাসীরা।
উৎসবে মাতানো তরুণ সোহেল লাখরা বলেন, আমাদের নিজের বিপদ থেকে মুক্তির জন্য ও দেশের মানুষের মঙ্গল কামনায় আমরা এ কারাম পূজাটি পালন করে থাতি। সুশীলা লাখরা বলেন, এটি আমাদের সবচেয়ে বড় একটি উৎসব। এই উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করে থাকি।
কারাম পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেরকেটা বলেন, এই কারাম বৃক্ষকে পূজা করার মাধ্যমে আমরা মনে করি আমাদের সকল বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। আর এ পূজার মাধ্যমে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারাম পূজাটি ঐতিহ্যবাহী বড় একটি উৎসব। তাদের সকল আয়োজনে জেলা প্রশাসন সাথে ছিল এরপরেও তাদের সকল আয়োজনে আমরা পাশে থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল