২ অক্টোবর, ২০২২ ২০:৪৩

করতোয়ায় মা-বোন ও দুই মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ আলো রানী

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

করতোয়ায় মা-বোন ও দুই মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ আলো রানী

আলো রানী

মা, বোন আর দুই মেয়েকে হারিয়ে পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে গেছেন আলো রানী। দুই মেয়ের মরদেহ খুঁজতে আজও করতোয়ার পাড়ে এসেছেন বাবা ধীরেন রায়। সঙ্গে এসেছেন জ্যোতি (২) ও জয়া রানীর (৪) বড় ভাই শান্ত।

পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে ধীরেনের দুই মেয়ে মারা গেছেন। নৌকা ডুবির দু’দিন পর ছোট মেয়ে জ্যোতি রানীর (২) মরদেহ খুঁজে পান তিনি। কিন্তু এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বড় মেয়ে জয়া রানীর মরদেহ। দুই মেয়েকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে তাদের পরিবার। জ্যোতির মা আলো রানী কাঁদতে কাঁদতে বুক ভাসাচ্ছেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘাটিয়ার পাড়া গ্রামের এই পরিবার এখন নিথর হয়ে পড়েছে। গ্রামের প্রতিবেশীরাও এ ঘটনায় নিঃস্তব্ধ।

আলো রানী জানায়, জয়া রানী বড় হচ্ছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে তাকে স্কুলে ভর্তি করবো। তাই আমার জন্ম নিবন্ধনের কাগজ পত্র আনার জন্য মাড়েয়ার ফুটকিবাড়িতে মায়ের বাড়ি যাই। গরীবের সংসার। সবসময় কাজ কামে ব্যস্ত থাকি। মায়ের বাড়ি যেতে পারি না। বছরে এক দুবার যাই। এবার যেদিন যাই তার পরদিন মহালয়া। সবাই বললো অনেক দিন পর এসেছিস বদেশ্বরি মন্দিরে মহালয়ার পূজো দিয়ে যা। আমিও ভাবলাম মেয়েকে প্রথম স্কুলে ভর্তি করাবো। মন্দিরে গিয়ে বলে আসি। সবাই মিলে গেলাম। ঘাটে নৌকায় উঠলাম। আমরা প্রথমে উঠেছি। তখন এতো ভীড় ছিল না। পরে অনেক মানুষ চাপাচাপি করতে লাগলো।

তিনি আরও বলেন, আমার জ্যোতি আমার কোলে। জয়া পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল নানী আর খালার সাথে। আমার বোন জয়ার হাত ধরেছিল। কখন যে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। নৌকাটা উল্টে যাবার সাথে সাথে মানুষের চাপে জ্যোতি ছিটকে পড়ে গেল। জ্যোতি কোথায় জানি না। সবাই আমাকে ধরে পানির নিচে টানতে লাগলো। আমি সাঁতার জানতাম। সাতার কাঁটছি আর জয়া জ্যোতিকে খুঁজছি। কোন মতে ভেসে ভেসে অনেক দূর এসে দেখি কে যেন আমাকে উপরে তুলে এনেছে। পরে জানলাম আমার মেয়ে দুটো নাই। তারপর শুনলাম আমার মাও ডুবে গেছে, আমার ছোট বোনও মারা গেছে। আমার পরিবারের পাঁচ জন মারা গেছে। আমার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় মহালয়া পূজা উপলক্ষে বদেশ্বরী মন্দীরে যাওয়ার জন্য নৌকায় করতোয় নদী পার হওয়ার সময় নৌকা ডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একই ঘটনায় নিখোঁজ আরও তিনজন রয়েছে। এখন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট। তবে নৌ দুর্ঘটনার ৮ম দিনেও নিখোঁজ স্বজনেরা প্রিয় ব্যক্তির মরদেহ পাওয়ার আশায় এখনো করতোয়া নদীর ঘাট এলাকায় অপেক্ষার প্রহর গুণছেন।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে। এদিকে, আজ রাতেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন তদন্ত কমিটি। সোমবার জানা যাবে এই নৌকা ডুবির কারণ।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বোদা উপজেলায় মাড়েয়া বামনহাট আউলিয়া ঘাটে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পঞ্চগড়ে এখনো কাটেনি মৃত্যু শোক। দুর্গা পূজার মণ্ডপগুলোতে লেগে আছে স্বজন হারানোর শোক। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর