ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে কৃষক হাফিজুর রহমান হত্যার ঘটনায় বিএনপি নেতা আনিচুর রহমান মাষ্টারসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। সোমবার রাতে নিহতের ভাই জাফিরুল ইসলাম বাদি হয়ে এই মামলা করেন। এতে বিএনপি নেতার ভাই উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি ও বিগত ইউপি নির্বাচনে দৌলতপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সেকেন্দার আলীসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সেকেন্দার আলী, শাহিন জোয়ার্দার, আলমগীর হোসেন আলম এবং জাহিদুল ইসলাম। এদের মধ্যে সেকেন্দার ও শাহিনকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং অন্য দুইজনকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। নিখোঁজের ৪ দিন পর গত ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের চরের মাঠের পাশে কাটা খালের পাড় থেকে পলিথিনে মুড়িয়ে মাটির নিচে পুতে রাখা ওই কৃষকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কৃষক হাফিজুর রহমান উপজেলার রিশখালী গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে। গত ৫ অক্টোবর সে নিখোঁজ হয়।
এদিকে এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচন ও এর সাথে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা দা, কোদাল, রক্তমাখা মাটি, পলিথিনের অংশ, জিআই তার ও ভিকটিমের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলেও পুলিশ জানায়। মঙ্গলবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শৈলকুপা সার্কেল) অমিত কুমার।
তিনি বলেন, সামাজিক বিরোধ এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই কৃষককে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেফতার দুই আসামীর দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকান্ডে জড়িত সকল আসামীকে শনাক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসহ অন্যান্য আলামত।
তিনি আরও বলেন, আসামীদের মধ্যে কেউ কেউ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তাদের নামে অস্ত্র আইনেসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁদের টাকার বিনিময়ে ভাড়া করা হয়েছিল। বাকিদের সাথে পূর্ব শত্রুতা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে অনেক তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে।
র্যাব-৬, ঝিনাইদহের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিকেলে পৃথক আরও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিখোঁজ ডায়েরির একটি কপি তাদেরকেও দেওয়া হয়। এর পর থেকেই তাঁরা এটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। মোবাইল ট্রাকিংসহ নানাভাবে তারা এর সাথে জড়িতদের ধরতে অভিযান চালান।
ঝিনাইদহ র্যাবের কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ শরীফুল আহসান জানান, তাদের গোয়েন্দা শাখার তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে সদর উপজেলার সাধুহাটি বাস স্ট্যান্ড থেকে ওই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকান্ডের সাথে আসামীদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় ।
ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, নিহত হাফিজুর এবং তাঁকে হত্যার পরিকল্পনাকারী আনিচ মাষ্টার ও সেকেন্দার আলীর বাড়ি একই গ্রামে। হাফিজুরের চাচা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কিছুদিন আগে গ্রামের একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটে। প্রতিশোধ নিতে এই হত্যার ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয় মাথায় নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। জড়িত সকল আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ