নদীতে বাড়ি ভাঙলে কোথায় যাবেন সালমা বেগম (৭০)। ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনি নিয়ে তার সংসার। খেয়ে না খেয়ে পরে আছে স্বামীর ভিটায়। কয়েকদিনের তীব্র ভাঙনে ব্রিজসহ সরকারি রাস্তাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সালমা বেগমের বাড়িটি এখন একেবারে নদীর কিনারায়। নদী ভাঙনের ভয়ে তিনি রাতদিন নির্ঘুম সময় পার করছেন। তার মুখে একটাই প্রশ্ন- ছয় শতাংশের বাড়িটি ভেঙে গেলে কই যামু?
সালমার বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কোশুন্ডা গ্রামে। সালমা কান্নাজরিত কণ্ঠে জানান, স্বামীর রেখে যাওয়া এই ছয় শতাংশ বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। দুই ছেলে ছিল একজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অনেক আগেই। আরেক ছেলের বউ নাতি নাতনি নিয়ে তিনি থাকেন। ছেলের আয় রোজগার একেবারে নাই বললেই চলে।
সরেজমিনে দেখা যায় নদী পারের লোকজনের মাঝে অজানা আতংক বিরাজ করছে। মাত্র কয়েকদিনের ভাঙনে এলাকার পাকা ব্রিজ, পাকা রাস্তাসহ অনেক ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে পেচারকান্দা হইতে এই রাস্তা দিয়ে ঘিওরে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। পেচারকান্দা বাজার থেকে কোনো ধরনের যানবাহন এই আঞ্চলিক সড়কে চলাচল করতে পাড়ছে না। মহা বিপাকে পড়েছে এ রাস্তায় চলাচলকারী ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ লোকজন। সেতু ভেঙে যাওয়ায় ঘিওর উপজেলা শহরে এখন কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। অনেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে পায়ে হেঁটে মানুষের বাড়ির উপর দিয়ে চলাচল করছে। এ ছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বেশকিছু বাড়িঘর। আতংকে দিন পাড় করছেন নদী পারের লোজন।
বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রতন মিয়া বলেন অপরিকল্পিত নদী খননের কারণে এই মরা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সঠিক নিয়মে খনন হলে নদীর গতিপথ ঠিক থাকতো। এ ধরনের ভাঙন হতো না।
বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আউয়াল খান বলেন, পুরাতন ধলেশ্বরী নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, এই নদীটি ভাঙন কবলিত নয়। কালীগঙ্গা ও পুরাতন ধলেশ্বরী নদীটি খনন করা হয়। নদী খননের কাজ উত্তরাংশ শেষ না হওয়ার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে চর জেগে উঠায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শুষ্কমৌসুমে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল