বগুড়ার নন্দীগ্রামে ওমরপুর পশুর হাটে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। মানা হচ্ছে না সরকারি নিয়ম নীতি। সংবাদ সংগ্রহ করে ফেরার পথে হাটের মধ্যে প্রকাশ্যে কয়েকজন সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিকদের হুমকির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।
উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় পৌরসভার ওমরপুরে সাপ্তাহিক এই পশুর হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হাটের ইজারাদারের লোকজন। পশু বহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহন থেকেও নেওয়া হচ্ছে চাঁদা।
গত শুক্রবার ছামিউল উসলাম নামের এক ক্রেতা ৭৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন। তার কাছ থেকে হাসিল আদায় করা হয়েছে ৬শ’ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে নিয়েছে ১শ’ টাকা। অথচ ৯২৭ নং রসিদে গরুর মূল্য উল্লেখ থাকলেও হাসিল আদায়ের টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই। ক্রেতারা পশু কিনে হাট থেকে বের হওয়ার পূর্বেই রসিদ অর্ধেক কেটে রেখে দেয় ইজারাদারের লোকজন।
তিনজন আদায়কারী অনিয়ম স্বীকার করে বলেন, সরকারি নির্ধারিত হাসিল ৩শ’ এবং ৪শ’ টাকা। ইজারাদারের কথামতো তারা নিচ্ছেন ৭শ’ টাকা। অতিরিক্ত এসব টাকা ইজারাদার, আদায়কারী, প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করতে ব্যয় করা হয় বলে দাবি করেন তারা। এছাড়া হাটে হাসিল আদায়ে সরকারি নির্ধারিত টাকার পরিমাণের তালিকা টাঙানো হয় না। প্রকাশ্যে অতিরিক্ত হাসিল আদায় বন্ধে উপজেলা প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা।
হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা হচ্ছে। হাসিল আদায়ের পর ক্রেতা-বিক্রেতাকে যদিও রসিদ দিচ্ছে, সেখানে পশুর মূল্য উল্লেখ করে দেওয়া হয়। রসিদে হাসিলের টাকার পরিমাণ লেখা হয় না। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সময় কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও নেয়। ভিডিওতে ইজারাদারের লোকজন অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ফেরার পথে হাটের মধ্যে প্রকাশ্যে ৪জন সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় হাটের ইজারাদারের লোকজন।
নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, ওমরপুর পশুর হাটে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের খবর পেয়ে কয়েকজন সাংবাদিকসহ তিনি হাটে যান। পশুর হাটে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রমাণ মেলে। ভিডিও নেওয়ার সময় ইজারাদারের লোকজন সাংবাদিকদের হাত ধরে টানাটানি করে। ইজারাদারের ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফেরার পথে হাটের মধ্যেই ইজারাদারের ঘরের সামনে সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয় কয়েকজন ব্যক্তি। তারা বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করেই সব করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত টাকা আদায় বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, সাংবাদিকের ভিডিওতে দেখেছি, ওমরপুর পশুর হাটে ব্যাপক অনিয়মের কথা আদায়কারীরা স্বীকার করেছে। সব হাটে সব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ইজারা আদায় করা হচ্ছে। কোথাও সরকারি নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। জনগণের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।
নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানান, সাংবাদিকদের হুমকির ঘটনায় অভিযোগ বা জিডি পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশুর হাটে কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল