শীত নিবারণের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে লেপ-তোষক। জাজিম, লেপ-তোষক ও তুলার বালিশ আরামদায়ক ও ঐতিহ্য। শীতের সময় গ্রাম ও শহরের মানুষের প্রতিদিনের ব্যবহারের বস্তু হচ্ছে এগুলি। একসময় বিয়েতে মেয়ের সাথে লেপ-তোষক ও একজোড়া মাথার বালিশ দেয়া ছিল পরিবারের ঐতিহ্য। কালের বিবর্তনে কম্বলের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে লেপ তোষক ও তুলার বালিশের ঐতিহ্য।
মানিকগঞ্জ শহরের পুরানো ব্যবসায়ী রেখা বেডিং ষ্টোরের মালিক মো. মহর আলী (৬৮) বলেন, বাপ দাদার আমল থেকেই আমাদের বেডিং এর ব্যবসা। এক সময় সিরিয়াল দিয়া বেচাবিক্রী হতো। বিশেষ করে শীত মৌসুমে বিয়েতে লেপ-তোষক একজোড়া বালিশ দিতেই হতো। স্বচ্ছল ব্যক্তিরা জাজিমসহ দিতো। বর্তমানে কোনও তুলার কাজ নেই। শিমুল তোলার একটি বালিশ তৈরিতে খরচ হয় ১২০০ টাকা। আর গার্মেন্টস এর জুট দিয়ে তৈরি বালিশের দাম মাত্র ২০০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, আগে কয়েকজন কারিগর দিয়ে কাজ করানো হতো। এখন নিজ হাতে কাজ করেই চলতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে এ ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। ১০০ টাকা হলে কম্বল পাওয়া যায়। ১৫০০ টাকার কমে একটি লেপ হয় না। তাছাড়া একদম নিম্নমানের জুট ও কাপর দিয়ে লেপ-তোষক তৈরি করে ফেরিওয়ালারা কম দামে বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসে। দিনে দিনে এ পেশার লোক কমে যাচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী চান মিয়া বলেন, কম্বলের দাম কম হওয়ায় মানুষ সেইদিকেই ঝুকছে। তাছাড়া কম্বল টিকে বেশিদিন, ধোয়া যায়, গরমের সময় সংরক্ষণ করা সহজ। বিভিন্ন কারণেই মানুষ আর লেপ-তোষক কিনতে চায় না।
ব্যবসায়ীরা জানান, কম্বলের প্রচুর চাহিদা। একশত টাকা থেকে শুরু করে সাত হাজার টাকা দামের কম্বল বিক্রী হচ্ছে। মানিকগঞ্জ শহরের এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, এ মাসে মেয়ের বিয়ে। খাটের সাথে ম্যাট্রেস ও ফোমের বালিশ দেয়া হবে। লেপ-তোষকের ঝামেলা নেই।
শীত মৌসুমে সচ্ছল ব্যক্তিরা প্রতিবছর প্রচুর কম্বল অসহায়দের মাঝে দান করে থাকেন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ তোতা বলেন, সহজে বহণযোগ্য ও দামে কম হওয়ায় আমি প্রতি বছর গরিব ও অসহাদের মাঝে কম্বল দিয়ে থাকি। এবার সবে মাত্র কম্বল বিতরণ শুরু করেছি। একটি কম্বল কয়েক জনে ব্যবহার করতে পারে। অন্যকিছু দিলে একজনে ব্যবহার করতে পারতো। এ জন্য দিন দিন কম্বলের চাহিদা বেড়েই চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ