বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি আব্দুর রউফ (৪২) পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে এবং গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনের পর ছদ্মবেশ ধারণ করেন। এরপর নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলের তিশিখালি মাজারে থাকতে শুরু করেন। সেখান থেকেই মাদকের কারবার চালিয়ে যান। আব্দুর রউফ নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা সোনাপুকুর এলাকার মৃত আতাহার আলীর ছেলে।
জানা যায়, ২০২০ সালে আত্মগোপনের আগে তার হালকা গোঁফ ছিল। সাড়ে তিন বছর পর তার বড় গোঁফের সঙ্গে লম্বা এবং জটা দাড়ি দেখা যায়। মাথার চুলগুলোও প্রায় দেড় ফুট লম্বা। গলায় বেশ কয়েকটি তাসবিহর সঙ্গে আছে তাবিজ। হাতে বালার জটলা। নিজেকে গোপন রাখতে চেহারার পরিবর্তন এনেছেন। অবশেষে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চলনবিলের তিশিখালি মাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে রউফকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আব্দুর রউফের প্রথম স্ত্রী আলেমা বেগম জানান, আত্মগোপনের পরিকল্পনা করে ২০২০ সালে গ্রামের দাদন কারবারির কাছে বাড়ি বন্দক রেখে ২০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয় রউফ। আত্মগোপনের পর থেকেই সে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেনি। দাদন কারবারির চাপে অসহায় স্ত্রী একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি বন্দকের টাকা পরিশোধ করেন। এনজিওর ঋণের কিস্তি টাকার জন্য বাড়ি ছেড়ে জামাদারপুকুর পলগাছা এলাকার এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মরিচ ক্ষেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেন। ৯ মাস দিন মজুরির কাজ করে সেই টাকায় এনজিওর ঋণও পরিশোধ করেছেন। আলেমা বর্তমানে রণবাঘায় নিজ বাড়িতে থাকেন এবং অন্যের জমি নিড়ানিসহ দিনমজুরির কাজ করে তার তিন বেলার খাবার জোটে।
নন্দীগ্রাম থানার এএসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, একটি মাদক মামলায় তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা রিসিভ করেন তিনি। গত সাড়ে তিন বছর অনেক সোর্স কাজে লাগিয়েও রউফের অবস্থান জানতে পারেননি। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে আরেকটি মাদক মামলার ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসে। বেশ কয়েকজন সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারেন রউফ বর্তমানে চলনবিলের তিশিখালি মাজারে অবস্থান করছে। গত বৃহস্পতিবার সিংড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে রণবাঘায় প্রথম স্ত্রী রেখে আত্মগোপনের পর আসমা নামে এক জটা পাগলিকে বিয়ে করে তিশিখালি মাজারেই থাকতো।
নন্দীগ্রাম থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ২০১৬ সালের মে মাসে পৌর সদরের কলেজপাড়া এলাকায় পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে ১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ রউফকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একই বছরের নভেম্বর মাসে সদর ইউনিয়নের রনবাঘা সোনাপুকুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গাঁজাসহ এবং ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে রণবাঘা বাজার মসজিদ এলাকার একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে গাঁজাসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
বিডি প্রতিদিন/এমআই