শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান। কুমিল্লা নগরীর ছাতিপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী। তিনি ধাতব মুদ্রা ও বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করেন। তার সংগ্রহে রয়েছে ৩০০বছরের বিরল রুপার হুক্কা। তিনি দাবি করেন দেশে একমাত্র ৩০০বছরের প্রাচীন রুপার হুক্কা শুধু তার সংগ্রহে রয়েছে। এছাড়া তার সংগ্রহে রয়েছে ১১৬বছরের পালং খাট, ২৫০বছরের রুপার টাকা রাখার বক্স, রুপার পানদানি, গহনার বক্স, রুপার নৌকা,চেয়ার, সেতার,পায়ের মল, গলার হার, কাটা চামচ,চামচ, গ্লাস, সুরমাদানি, আতরদানি ও কুপি প্রভৃতি।
৬২ বছর ধরে বিভিন্ন দেশের ধাতব মুদ্রা ও সামগ্রী জমা করেন তিনি। মুদ্রাগুলোর কোনটি বয়স ২৫০বছরের বেশি, কোনটির বয়স সর্বনিম্ন ১০০বছর। তার মধ্যে রয়েছে ভারত,পাকিস্তান,সৌদি আরব,আরব আমিরাত, মালেয়শিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ ৩০ দেশের মুদ্রা। মুদ্রার সংখ্যা দুইশ’ ছাড়িয়ে। আলমগীরের বাড়ি যেন প্রাচীন সামগ্রীর জাদুঘর। তিনি এই সংগ্রহ আরো বাড়াবেন বলে জানান। ধাতব মুদ্রা ও প্রাচীন জিনিসপত্র দেখতে প্রায়ই তার বাড়িতে মানুষজন আসেন।
বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কফি কালারের লোহা কাঠের নকশা করা খাটটি এখনও মজবুত। গত ৫০ বছরে একবার বার্নিশ করা হয়েছিলো। এখনও এটি নতুনের মতো। এদিকে ধাতব জিনিসপত্র ও মুদ্রা গুলোর ধুলাবালি পরিষ্কার করছেন আলমগীর খান ও তার পরিবারের সদস্যরা। খাট ও প্রাচীন জিনিসপত্র দেখতে প্রায় বাড়িতে মানুষ আসে বলে জানান বাড়ির লোকজন।
৬৯ বছর বয়সের শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান জানান, পিতা আজম খান অলংকারের ব্যবসা করতেন। তাদের ব্যবসার বয়স ৭৯ বছর। শখ থেকে তিনি ধাতব মুদ্রাগুলো সংগ্রহ করেন। পালং খাটের বয়স ১১৮ বছর। ১৯৬৭সালে বাবা আজম খান ও ১৯৮৮ সালে মা তাহেরা বেগম মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পার এটি আর তেমন ব্যবহার হয় না। অনেকে এসেছেন এটি নিয়ে যেতে। এই খাটের কাছে আসলে মা- বাবার কথা মনে হয়। তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে এটি যুগের পর যুগ সংরক্ষণ করছেন। তার সন্তানদেরও অনুরোধ করেছেন ধাতব মুদ্রা ও বিভিন্ন সামগ্রী যেন বিক্রি না করেন।
শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান জানান, পালং খাটটি তার বাবা পাকিস্তান আমলে মুরাদনগর এলাকার এক জমিদার থেকে ৫০০টাকা দিয়ে সংগ্রহ করেন। সাথে আনেন একটি ড্রেসিং টেবিল ও আলমিরা। খাটটি শত বছর আগের মতোই নতুন। এখনো কোন গুনে পোকায় ধরেনি।
ছোট বেলায় বোন রোকেয়া বেগম কাজলসহ মা- বাবার সাথে ঘুমিয়েছেন এই খাটে। তার জন্মের আগে এটি সংগ্রহ করা হয়। খাটের গায়ে খোদাই করে লেখা আছে ৮ কার্তিক ১৩১৭ বাংলা। এর কারিগর কৈলাস চন্দ্র সূত্রধর। তাদের বাড়িতে এটি আছে ৭৭ বছর ধরে। এটি লম্বা ৮ ফুট। পাশে ৬ ফুট। খাটের স্ট্যান্ডসহ উচ্চতা সাড়ে ৭ফুট। খাট ফ্লোর থেকে ২ফুট উঁচুতে। এদিকে রুপার হুক্কাটি তিনি কুমিল্লা নবাবা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করেন।
কুমিল্লা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল আবেদীন বলেন, ২৫০বছরের ধাতব মুদ্রা, প্রাচীন রুপার পানদানি, টাকা রাখার বক্স, গহনার বক্স গুলো প্রমাণ করে এই এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ওই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা। এগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি।
সাংস্কৃতিক সংগঠক জামিল আহমেদ খন্দকার ও ডা. ইকবাল আনোয়ার বলেন, এসব ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী প্রমাণ দেয় কুমিল্লা ও তার আশপাশের এলাকার সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার। আলমগীর খানের এই সংগ্রহ নতুন প্রজন্মকে তার এলাকার অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে সহযোগিতা করবে।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, কুমিল্লা ও তার আশপাশের এলাকা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। লোকজন সৌখিন ছিলেন। তার অংশ হিসেবে শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করছেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে সংরক্ষণে থাকা নির্দশন গুলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তারা চাইলে এগুলো জাদুঘরেও সংরক্ষণ করতে পারেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল