গাজীপুরে কারখানায় ঢুকে মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় ওই কারখানার ম্যানেজারকে হাতুড়ি, বাটাল ও স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে পিটিয়ে ও শরীরে ছিদ্র করে খুন করেছে কয়েকজন যুবক। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার এবং ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন এরশাদ নগর এলাকার আলী আকবরের ছেলে আজিজুল ইসলাম (২৮), একই থানার দত্তপাড়া ইসলামপুর এলাকার আব্দুল খালেক সরদারের ছেলে হুমায়ুন কবির ওরফে রোমান (৪০) ও দত্তপাড়া হাউজ বিল্ডিং এলাকার আব্দুল হালিম চৌধুরীর ছেলে জাফর ইকবাল (৪৩)। অপরদিকে নিহত মোঃ হাসান (৪৫) পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থানাধীন সুটিয়াকাঠি এলাকার আউয়াল তালুকদারের ছেলে।
গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন দত্তপাড়া দিঘীরপাড় এলাকার হাজী মোঃ মাঈন উদ্দিন মিয়ার ফার্নিচার কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন ভিকটিম মোঃ হাসান (৪৫)। তিনি কারখানার পূর্ব পাশের একটি কক্ষে বসবাস করতেন। গত ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি নিখোঁজ হন হাসান। স্বজনরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সন্ধান পাননি। একপর্যায়ে তার সন্ধানে দু’দিন পর ২৯ জানুয়ারি রাতে মালিককে সঙ্গে নিয়ে কারখানার তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে কারখানার মেঝেতে হাসানের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। নিহতের নাক, মুখ, চোয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, টংগী থানা পুলিশ প্রায় সোয়া তিন বছর ক্লু-লেস এ মামলাটির তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে চুড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন ওই থানার তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তীতে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান তদন্তকালে এ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আজিজুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির ওরফে রোমান ও জাফর ইকবালকে গ্রেফতার করে।
তিনি গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে জানান, গ্রেফতারকৃতরা টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি এবং মাদকের আড্ডা বসাতো ও সবাই মিলে মাদক সেবন করতো। তাদের ৮/১০ জনের একটি গ্রুপ রয়েছে। ঘটনার দিন ওই তিনজনসহ ৬/৭ জন যুবক দত্তপাড়া দীঘিরপাড় এলাকার ওই ফার্নিচার কারখানার ভিতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে মাদক সেবন করতে শুরু করে। এসময় ম্যানেজার হাসান কারখানায় মাদক সেবন করতে নিষেধ করলে যুবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তারা কারখানার ভেতরে থাকা হাতুড়ি বাটালসহ ফার্নিচার তৈরীর অন্যান্য সরঞ্জামাদি দিয়ে হাসানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে। এসময় তারা হাসানের বাম বুকে স্ক্রুড্রাইভার ঢুকিয়ে দেয়। এতে হাসান অচেতন হয়ে পড়ে। তাকে কারখানার ভিতরে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। ইতোপূর্বেও কারখানার ভিতরে মাদক সেবনে নিষেধ করায় হাসানের সঙ্গে তাদের বাকবিতন্ডা হয় বলে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃত আজিজুল ও রোমান এ মামলার ঘটনায় নিজেদের ও অন্যান্য জড়িতদের ভূমিকার বিস্তারিত বর্ণনা জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ফার্নিচার কারখানার ম্যানেজার হাসান হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই।
বিডি প্রতিদিন/এএ