২১ মার্চ, ২০২৩ ১৭:৪৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৫ বেদে পরিবার পাচ্ছে পাকা ঘর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৫ বেদে পরিবার পাচ্ছে পাকা ঘর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৫ বেদে পরিবার পাচ্ছে পাকা ঘর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাচ্ছেন ৩৫ বেদে পরিবার। নৌকায় ঘুরে বেড়ানো এসব বেদে পরিবারকে আগামীকাল বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ খবরে বেদে পল্লীতে আনন্দের জোয়ার বইছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে গৃহহীনদের ঘর দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তারই অংশ হিসেবে তাদের এ ঘর দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে এসব ঘরের উদ্বোধন কার্যক্রমে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেবেন।

বেদে পরিবারের ফারুক মিয়া বলেন, ‘নিজের ঘর নেই, কিন্তু কখনো স্বজনদের ঘরেও ঘুমাইনি। কামে গিয়া হোটেলে ঘুমাইছি। তহন এত শান্তি লাগদো। কিন্তু করার কিছু নাই। একদিন খাইলে আরেকদিন খাইতে পারি না। বাড়ি করার কতা কুন সময় চিন্তা করুম।’

মঙ্গলবার এভাবেই কথা বলেন তিনি। এসেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পেয়ে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাজে। বিল্ডিং ঘর পাওয়ার কথা বলে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি ও তার স্ত্রী পিংকী বেগম। পিংকী বেগম বলেন, নৌকা থেকে ডেরা। আর ডেরার বদলে অহন বিল্ডিং।

ফারুক মিয়া ও পিংকী বেগমের মতো তাদের জাতের ৩৫ বেদে পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। বেদে পরিবারগুলো মূলত নৌকায় বসবাস করে। কেউ কেউ আবার এখন নদীর পাড়ে প্লাস্টিকের ডেরা তৈরি করে বসবাস করেন। সাপ খেলা দেখানো, তাবিজ বিক্রি, কবিরাজি, বানর খেলা দেখানোসহ নানা পেশার সঙ্গে তারা জড়িত। মূলত বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা পেশার সঙ্গে বেশি জড়িত।

বেদে আব্দু মিয়ার বয়স ৭০-এর কাছাকাছি। ছিলেন ভারতের বাসিন্দা। যুদ্ধের সময় থেকে আছেন বাংলাদেশে। তার বাবা কদম আলীও ছিলেন বেদে। তবে তার জানামতে বংশানুক্রমে পরিবারের কেউ এখনো নিজ ঘরে ঘুমাতে পারেননি। এখন তার সাত ছেলের মধ্যেই ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে জায়গাসহ ঘর পেয়েছেন। তার সব সন্তানই নৌকায় জন্ম নিয়েছেন উল্লেখ করে এখন বেজায় খুশি বলে এ প্রতিবেদককে জানান। তিনি বলেন, নিজের ঘর দেখে মরতে পারবো, এটাই শান্তি।

ঘর হওয়ার পর নিজের সন্তানকে পুলিশ কিংবা উকিল করার স্বপ্নের কথা জানালেন বেদে উজ্জল মিয়া। তিনি বলেন, নিজে পড়াশোনা করি নাই। এখন ছেলে মেয়েকে পড়াবো। সরকার সুযোগ করে দিলে পেশাটাও বদলাতে চাই।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, বেদেদের দুর্দশার কথা জেনে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরী তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করতে বলেন। স্যারের প্রচেষ্টায় আশ্রয়ণ-২ প্রল্পের আওতায় কাঞ্চনপুর গ্রামের ৪২টি ঘরের মধ্যে ৩৫টি ঘর বেদেদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর তাদের হাতে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আমরা তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবো।

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর উপজেলা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে ৩৫টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিকটেই বিদ্যালয় রয়েছে। নিবাসীদের সন্তানরা যেন পড়াশোনা করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর