২৭ মার্চ, ২০২৩ ১৬:০৭
অপহরণ আতঙ্কে টেকনাফ

সশস্ত্র দুর্বৃত্তের হাত থেকে ছেলেকে রক্ষা করলেন সাহসী বাবা

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

সশস্ত্র দুর্বৃত্তের হাত থেকে ছেলেকে রক্ষা করলেন সাহসী বাবা

কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি দুর্বৃত্তের কবল থেকে স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে রক্ষা করলেন সাহসী পিতা। এছাড়া অপর এক অপহরণের ঘটনায় ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণে ৩ যুবককে মুক্তি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক এলাকায়। এসময় পিতা-ছেলে দুর্বৃত্তের কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও তাদের এলোপাতাড়ি মারধরে দু'জনই আহত হয়েছে।

এরা হচ্ছেন, মৃত আবদুল খালেকের ছেলে মোহাম্মদ হোছন ও তার ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া আবদুল আজিজ।

গত ২৩ মার্চ রাত ৯টার দিকে তার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

মোহাম্মদ হোছন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রতি দিনের মতো মাগরিবের পর থেকে পড়ার টেবিলে স্কুলের পড়া শিখছিলো আব্দুল আজিজ। পড়া শেষ করে রাত ৯ টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির উঠানে বের হলে হঠাৎ মুখে কালো কাপড় পরা সশস্ত্র ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত তাকে ধরে ফেলে। এসময় তার চিৎকারে বাবা হোছন ঘর থেকে দ্রুত বের হলে তাকেও ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু সাহসী হোছন সু-কৌশলে দুই জন দুর্বৃত্তের লম্বা বন্ধুক ধরে টানদিলে ছেলে আজিজকে ছেড়ে দেয় এবং আজিজ দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে। এসময় অপর দুর্বৃত্তের বন্ধুকের আঘাতে আজিজের হাত ভেঙে যায়। এদিকে দুর্বৃত্তের সাথে ধস্তাধস্তি ও তাদের বাড়ির সকলের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তের দল হোছনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং একপর্যায়ে তাকে ফেলে পাহাড়ের দিকে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।

এলাকাবাসীরা আরো জানায়, ১৫-২০ জনের দুর্বৃত্তের দল পাহাড়ে অবস্থান করছে দীর্ঘ দিন ধরে। সেখানে বেশিরভাগই রোহিঙ্গা। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

এদিকে গত ২২ মার্চ দমদমিয়া এলাকার ৩ যুবক ও ১৯ মার্চ জাদিমুড়াস্থ জুম্মাপাড়ার একজন কৃষক কে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। তাদের মধ্যে কৃষক ছৈয়দ উল্লাহ ৫ দিন পর ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসে এবং দমদমিয়া এলাকার ৩ যুবক রিদুয়ান সবুজ, মোস্তফা ও রহমত উল্লাহকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকায় মুক্তিপণে রবিবার বিকেলে মুক্তি দেয়। মুক্তিপণ নেওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের শরীরে মারধরের জখম রয়েছে। এর আগে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এমনটি জানিয়েছেন তাদের পরিবার। এতে চরম উৎকণ্ঠা ও উদ্বিগ্নে রয়েছে পরিবারসহ এলাকাবাসী। 

পবিত্র রমজান মাসে অপহরণ আতঙ্কে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় রবিবার স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলী স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এসময় তিনি সম্মিলিত ভাবে দুর্বৃত্তের মোকাবেলা করার সাহস যোগান এবং রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য ৪টি দলে বিভক্ত করে পাহারা দল গঠন করেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী মেম্বার বলেন, রোহিঙ্গা দুর্বৃত্ত পাশের পাহাড়ে অবস্থান করে শান্ত এলাকাকে অশান্ত করে তুলছে। যে কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে। তারা সশস্ত্র হওয়ায় ভয়ে রয়েছে এলাকাবাসী। তাদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাছির উদ্দীন মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য,  গত ১৬ মার্চ উপজেলার বাহারছড়ার ইউনিয়নের জাহাজপুরা এলাকা থেকে ৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারা হলেন,কলেজ শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন (১৭), রশিদ আলম (২৬), জানে আলম, (৪৫),জাফর আলম (৪০),জাফরুল ইসলাম (৩০),ফজল করিম (৩০) ও আরিফ উল্লাহ (৩০) । তারা সকলেই বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব মাঠ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। পৃথক মুক্তিপণ দিয়ে তারাও ফিরে আসেন।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর