নাটোরে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলায় বিএনপির পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে।

শনিবার দুপুর ২টায় শহরের আলাইপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

নাটোর সদর থানা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার ২টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপি শহরের আলাইপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন শহরের মুসলিম ইন্সিটিটিউট চত্বর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান সমর্থিত শতাধিক নেতাকর্মী মোটরসাইকেল বহরসহ লাঠিসোটা নিয়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আসেন। তারা এলোপাতাড়ি ভাঙচুর ও মারপিট শুরু করেন। তারা সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেনকে হকিস্টিক দিয়ে মেরে গুরুতর রক্তাক্ত করেন এবং তার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করেন। এ সময় সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হাত থেকে আবুল হোসেনকে উদ্ধার করেন এবং অটোরিকশায় করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। পরে তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

কিছুক্ষণ পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারী জেলা যুবলীগের সভাপতি এহিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন যুবক হকিস্টিক হাতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে টহল দিতে থাকেন। শিমুল এমপির সমর্থকরাও প্রায় ৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে মহড়া দিতে শুরু করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে পুলিশ উভয়পক্ষকে ওই এলাকা থেকে চলে যেতে বললে তার সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একই স্থানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের প্রতিরোধের মুখে বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। উভয়পক্ষ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে শহরের প্রধান সড়ক দখল করে শান্তি সমাবেশ শুরু করে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় কিছুক্ষণের জন্য সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুর আড়াইটার দিকে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা শান্তি সমাবেশ শেষ করে সেখান থেকে চলে যান। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের শান্তি সমাবেশ শুরু হলে সেখানে শরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে। সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম মালেক শেখ, সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন। 

বক্তারা বলেন, ‘নাটোরে বিএনপিকে এক ইঞ্চি মাটিও ছাড় দেওয়া হবে না। তারা নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তাদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। এর ধারাবাহিকতায় আজও তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয়নি। তারা (বিএনপি) পালিয়েছে।’ 

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের নেতা আবুল হোসেনকে গুরুতর জখম করেছে। তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। 

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম মালেক শেখ বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড করে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত ১ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াত চক্র নাটোরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই হামলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই আমরা আর বিএনপিকে নাটোরে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেবো না। আমাদের দেখে তারা আজ পালিয়ে গেছে।’ 

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, ‘পুলিশ আগে থেকেই আলাইপুর এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। উভয়পক্ষকে শান্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বিএনপি কর্মসূচি পালন করেনি। বিচ্ছিন্ন ঘটনায় বিএনপির একজন আহত হয়েছেন। আমরা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।’ 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ