শতবর্ষী পুরনো ঐহিত্যকে ধরে রাখতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারোও নেত্রকোনার পূর্বধলায় বসেছে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা। দূর দূরান্ত থেকে আসা দোকানিরা মেলায় মাটির নানান হাতি ঘোড়া টমটম গাড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বৃহস্পতিবার চৈত্রের শেষ দিনে পুর্বধলা জগৎমনি সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসে এই মেলা। প্রতিবেশি সরকারি কলেজ ও জগৎমনি স্কুল মাঠ হিসেবে সকলের কাছে এই মেলার স্থানের পরিচয় রয়েছে যুগ যুগ ধরে। ফলে কোন মাইকিং ছাড়াই এখানে মেলা জমে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার পুরনো বিদ্যাপিঠ যার প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন জগৎমনি পরিবার। তারা তৎকালীন সময়ে রাজধলা বিলে স্মান সেরে বিকালে মেলা জমাতেন। এভাবে এই মেলার পরিসর বাড়তে থাকে বলে স্থানীয়রা জানান। পরবর্তীতে মেলা বেড়ে স্কুল মাঠ পাড় হয়ে কলেজ মাঠ ছাড়িয়ে যায়। এভাবে সকলের কাছেই পরিচিত হয়ে ওঠে চৈত্র সংক্রান্তিতে এখানে মেলা জমে। এতে স্থানীয়ভাবে মাঠের অনুমতি নিয়ে কিছু লাভবানও হন তারা। এবছর পুর্বধলা সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে মাঠে ভলান্টিয়ার রাখা আছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে মেলায় আসতে থাকেন দর্শানর্থীরা। মেলায় বিভিন্ন ধরনের খাবার সাজ সজ্জার দোকান ছাড়াও মৃৎ শিল্পের পসরা বসে। আর এগুলোই সকলের নজর কারে। হাতি ঘোড়া, টমটম গাড়ি, পুতুল, পালকি সহ নানা ধরনের সুন্দর সুন্দর খেলনা নিয়ে বসেন তারা। সেইসাথে ঘুরি নিয়েও বসেন বেশ কজন।
মৃৎ শিল্পীরা জানান তাদের পুরনো পেশা। বিভিন্ন সময় মেলা বসলে মেলাকে ঘিরে তারা এসকল বানান। যেখানেই মেলা হয় সেখানেই যান। এই মেলায় অনেকেই বছরের পর বছর ধরে আসছেন। দিনব্যাপী মেলায় সকল মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। শিশুদের আনন্দ দিতে নানা ধরনের খেলনা কিনেও দিচ্ছেন অভিভাবকরা। তবে এবারও রমজান থাকায় পুর্বের তুলনায় মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা কিছুটা কম।
মেলার আয়োজক কলেজ কলেজ শাখার সম্পাদক ইসরাত আহমেদ তাহিফ জানান, তাদের ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছে ভলান্টিয়ার। কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা দেখছে। এবার মেলায় প্রায় দেড়শত স্টল বসেছে। তারা খুশি হয়ে প্রতি দোকান যা দেয় তাই তারা নেন বলেও জানান।
পূর্বধলা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ অরিফুজ্জামান মাসুম জানান, এই মেলাটি জগৎমনি পরিবার প্রথম শুরু করে শুনেছি। তারা সকালে একটি পূজা করতো। বিকালে মেলা বসাত। এই মেলা বড় হতে হতে এমন বড় হয়েছে যে, জেলার নয় শুধু বাইরে থেকেও মানুষ আসতো। কিন্তু দিনে দিনে সেই জৌলুস হারিয়ে যাচ্ছে। তারপরও এখনো মেলাটি চলে কোন মাইকিং বা প্রচার প্রচারণা লাগে না।
বিডি প্রতিদিন/এএম