২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ১৮:২২

বগুড়ায় বোরো ধান কাটার আনন্দে মেতে উঠেছে কৃষক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় বোরো ধান কাটার আনন্দে মেতে উঠেছে কৃষক

ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বগুড়ার মাঠে মাঠে সবুজ রঙের বোরোগুলো এখন সোনালী রঙে ভরে উঠেছে। সোনালী রঙ ধারণ করায় সোনার ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। চাষের পর ধান কাটার আনন্দ বয়ে যাচ্ছে কৃষকের ঘরে। কৃষান-কৃষাণি মিলিয়ে মাঠে মাঠে ধান কাটার কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর বোরোর বাম্পার ফলনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন চাল আকারে ফলন পাওয়া যাবে। 

জানা যায়, বগুড়ার ১২টি উপজেলায় বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান মাড়াই শুরু হয়েছে। ধান মাড়াইয়ে পর খড় ভালোভাবে শুকিয়ে বাড়িতে তুলতে পারছেন বোরো চাষিরা। দুই সপ্তাহের মধ্যে সব বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হতে পারে। এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাচ্ছেন কৃষকেরা। 

জেলার বিভিন্ন উপজেলার বোরো ধানের মাঠ ঘুরে দেখা যায়- প্রায় বোরো জমির ধান পেকে সোনালী রঙে শোভা ছড়িয়ে দুলছে জমিতে। পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক-শ্রমিক। শ্রমিকের পাশাপাশি ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ও রিপার মেশিন।  

কৃষকরা বলছেন, নানা প্রতিকূলতার পরও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে এবার বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই বৈরী আবহাওয়ার ধকল, তারপর দফায় দফায় কৃষি উপকরণের বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে কৃষককে। 

চাষিরা বলছেন, গত মৌসুমের চেয়ে এবার চাষাবাদে বিঘাপ্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কৃষি উপকরণের বাড়তি দর আর বৈরী আবহাওয়ার ধকল থাকলেও শেষ মুহূর্তে কাঙ্খিত ফলন হওয়ায় আলো দেখছেন তারা। তবে নতুন ধান হাটে তোলার পর ন্যায্য মূল্য পাবেন কি না, তা নিয়ে কৃষকদের মনে সংশয় রয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে- প্রতিকূল আবহাওয়া, সহায়ক ধানের জাত নির্বাচন আর কৃষকদের আধুনিক কলাকৌশল প্রদান করায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন হবে। জেলায় চলতি মৌসুমে অন্তত ১২ থেকে ১৩ জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল কাটারি, নাজির, জিরাশাল ও ব্রি ৪৯, শুভলতা ও কাজল লতা জাত।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩ মেট্রিকটন। গত বছরে বোরা চাষ হয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। বগুড়ায় এ পর্যন্ত ধান কাটার উপযোগী হয়েছে ২ থেকে ৩ শতাংশ। যার পরিমান ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ৫৭০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আগামী ১২  থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অধিকাংশ জমির ধান কাটার উপযোগী হবে এমনটাই আশা করছেন জেলার কৃষি কর্মকতারা। গতবারের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। এবার ধান কাটা শ্রমিক সংকট হবে না। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন দিয়ে বোরো চাষিরা ধান কাটা ও মাড়াই করছেন কৃষকরা।
 
বগুড়া সদর উপজেলার কর্নপুর গ্রামের কৃষক বুলু প্রামানিক জানান, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে শুভলতা ও কাজল লতা জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এবার বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মন ধান হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান ও খড় ভালো ভাবে শুকিয়ে বাড়িতে তুলতে পারছি। তবে গত মৌসুমের চেয়ে এবার চাষাবাদে বিঘাপ্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। শ্রমিক মুজরীসহ সবকিছুর দাম চড়া। 

তিনি আরও বলেন, ১ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদে মোট খরচ পড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মন কাঁচা ধান বিক্রি ১ হাজার পঞ্চাশ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। সরকার প্রতি মন বোরো ধান ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারন করে দিলেও হাটে ধানের পাইকরার আমাদের সেই মূল্য দিচ্ছে না। 

আরেক কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবদ করার পর এখন পর্যন্ত ১ বিঘা জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার শ্রমিক মজুরী বেশি। ১ বিঘা জমির ধান কাটতে প্রায় ৬ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এতে প্রতি বিঘা জমির ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক মজুরী দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে আগের বছরের চেয়ে লাভের অংশ কমে গেছে। সারের দাম বেড়েছে। বাজারে ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে পুষিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বহিরাগত শ্রমিকরা না আসায় এলাকার শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বহিরাগত শ্রমিকরা না আসায় স্থানীয় শ্রমিকরা নিজেদের ইচ্ছে মতো শ্রমের মূল্য বাড়িয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, বগুড়ায় বিগত দিনের মত চলতি মৌসুমেও ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। যে পরিমাণ ধান কাটা হয়েছে তা দেখে ধারণা করা হচ্ছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে এবং বগুড়ার মাটি বোরো ধানের আদর্শ থাকায় ভালো ফলন পাওয়া গেছে। জেলার বেশ কিছু হাটে নতুন ধান বেচাকেনা শুরু হয়েছে। 


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর