কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শনিবার যশোরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। এই সমাবেশ কেন্দ্র করে শহরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তার পরিবর্তে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড. রুহুল কবির রিজভী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
এদিকে বিএনপিকে এই সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যশোর আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বুধবার দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রতিহত করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন।
শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘যশোরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।’ ‘যারা দেশের উন্নয়ন চায় না, সেসব অগ্নি সন্ত্রাসীদের সমাবেশ করার কোন অধিকার এই দেশে নেই।’ বিএনপি যদি সমাবেশ করতে ঘর থেকে একপাও বের হয়, তাদের যেকোন মূল্যে প্রতিহত করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, শহর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।
সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, বিএনপির এতো সাহস, আওয়ামী লীগের সভাপতিকে হত্যার হুমকি দেয়। যশোরে বিএনপি আর কোন প্রোগ্রাম করতে পারবে না। যশোরের মাটিতে বিএনপি যাতে সমাবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার জন্য বলেন তিনি।
বিএনপির সমাবেশের একদিন আগে শুক্রবার যশোর টাউন হল মাঠে সমাবেশের ডাক দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। পরদিন ২৭ মে বিকেলে সমাবেশের জন্য এই মাঠটিই চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু এদিন একই সময়ে এই টাউন হল মাঠে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে সম্মিলিত পেশাজীবী শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদ। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু অভিযোগ করেন, সমাবেশ করার জন্য টাউন হল মাঠটি আমরা আগে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের না দিয়ে পেছনের তারিখ দিয়ে দরখাস্ত করিয়ে মাঠটি সম্মিলিত পেশাজীবী শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদকে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের এসব বক্তব্যকে আমলে নিচ্ছেন না বিএনপির নেতৃবৃন্দ। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা সেটাই করবো। কে কী বললো সেটা আমরা আমলে নিচ্ছি না।’ শনিবারের সমাবেশ সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে জেলা বিএনপি এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।
এই ব্রিফিংয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোরে বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই পুরো জেলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। একদিন পরই সমাবেশ। অথচ সমাবেশস্থলের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না। সমাবেশে লোক সমাগম কমাতে, সমাবেশকে ছোট করে দেখাতেই এসব করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সমাবেশের জন্য শহরের ৩/৪টি মাঠের যে কোন একটি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা অজুহাতে প্রশাসন রাজি হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত শহরের ভোলাট্যাংক সড়কটি চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২৭ তারিখে যশোরে সমাবেশ হবেই। পুরো যশোর জেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সমাবেশে যোগ দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁনসহ মূল দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল