অর্ধলক্ষ টাকায় হত্যার চুক্তিতেও কাজ হয়নি। স্ত্রী’র সাথে পরকীয়া সন্দেহে নিজেই পরনের টি-শার্ট খুলে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রিয়াদ হোসেনের (২১) লাশ বনের ভিতর ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। শনিবার রাতে র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকার একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হত্যার প্রধান আসামি নিহতের চাচা মো. নাঈম হোসেনকে (৩৪) গ্রেফতার করেছে।
তাকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন মাদনপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়, নাঈম এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। সেদিনাজপুর জেলার ইন্তাজুল ইসলামের ছেলে। গ্রেফতারকৃত নাঈমের দেয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী শফিপুর আন্দারমানিক পূর্বপাড়া এলাকার একটি ড্রেন হতে নিহত রিয়াদের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. পারভেজ রানা জানান, নাঈম হোসেন এবং রিয়াদ দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী থানাধীন পশ্চিম নারায়নপুর নামক একই গ্রামের বাসিন্দা। তারা দূর সম্পর্কের চাচা-ভাতিজা। নাঈম গত ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব প্রবাসী ছিল। সেই সময় প্রবাসীর স্ত্রী অর্থাৎ তার চাচীকে দেখাশোনার সুবিধার্থে চাচীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক হয় বলে নাঈম হোসেন সন্দেহ করে এবং এই সন্দেহের প্রেক্ষিতে গত ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন।
তিনি বলেন, নাঈম বিষয়টি রিয়াদের নিকট আত্মীয়দের জানায় এবং প্রতিহিংসার প্রেক্ষিতে তাকে হত্যার জন্য মনস্থির করে। নাঈম পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রিয়াদকে হত্যা করার জন্য ওই এলাকার পলাশ নামের এক ব্যক্তির সাথে অর্ধলক্ষ টাকায় চুক্তি করে এবং সেই মোতাবেক টাকাও প্রদান করে। পরে নাঈম গত ২০২২ সালের জুন মাসের দিকে তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিনাজপুর হতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে এবং রিয়াদকে হত্যার করার জন্য গত ২০ মার্চ মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে রিয়াদকে হত্যার করার জন্য পলাশকে চাপ দিতে থাকে। পলাশ ও নাঈম হোসেন রিয়াদের সাথে যোগাযোগ করে তার মেস থেকে চলতি জুন মাসের ১৩ তারিখে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় নিয়ে আসে। তারা রিয়াদকে চা-নাস্তা খাওয়ানোর পর কিছু সময় তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে।
সেদিন আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে নাঈম রিয়াদকে তার ভাড়া নেয়া পুকুর পাড়ে নিয়ে যায় এবং পলাশকে হত্যার করার জন্য বলে। এতে পলাশ অনিহা প্রকাশ করলে নাঈম নিজেই রিয়াদকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে নাঈম কৌশলে রিয়াদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মোবাইলের সকল ডাটা ডিলেট করে এবং পূর্বের ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটি করে। এক পর্যায়ে রাত পৌণে দুইটার দিকে নাঈম রিয়াদকে নিয়ে পুকুর পাড় হতে কালিয়াকৈরের রতনপুর ধোপাচালা এলাকার বনের ভিতর চলে আসে এবং নিজেই তার পরিহিত টি-শার্ট খুলে রিয়াদের গলায় ফাঁস লাগিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বরেও পুলিশ সুপার মো. পারভেজ জানান।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক