রাতভর টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যানজট। গতকাল সকালের শুরুতেই জলজট আর যানজটে একেবারে নাস্তানাবুদ রাজধানীর বাসিন্দারা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে এই ভোগান্তি মাথায় নিয়েই অফিসে গেছেন সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজে গেছে শিক্ষার্থীরা। মিরপুর, উত্তরা, ধানমন্ডি ২৭, পুরান ঢাকার অলিগলিসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি গলি পানিতে ডুবে যায়। কোনো কোনো এলাকার বড় রাস্তাও ডুবে গেছে বৃষ্টির পানিতে। পুরান ঢাকার বংশালে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আমিন (৩০) নামের এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সোয়া ৯টায় নাজিরা বাজারের আলাউদ্দিন রোডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, রবিবার রাত ১২টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজধানীতে ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত সড়ক পানিতে তলিয়ে ছিল। বিশেষ করে আল হেলাল হাসপাতালের সামনে থেকে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই ছিল হাঁটু সমান পানি। এ ছাড়া পূর্ব কাজীপাড়া, উত্তর কাজীপাড়া, সেনপাড়ায় বিআরটিএর পেছনের গলিতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে সড়কের ওই অংশে বাসসহ কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। এতে অন্যান্য যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। সড়কে তৈরি হয় যানজট। বেলা ১১টায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত মিরপুরগামী যানবাহন আটকে ছিল। এ সময় বেশির ভাগ বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পানিতে হেঁটে চলে যায়। একই অবস্থা দেখা যায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারী বর্ষণে রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, মগবাজার, মৌচাক, খিলগাঁও, রাজারবাগ, মালিবাগ, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, গ্রিন রোড, বিজয় সরণি, বংশাল, শান্তিনগর, ফার্মগেট, বনানী, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ঝড়ে কোথাও কোথাও সড়কে উপড়ে পড়ে গাছ। এতে সড়কে যানবাহনের গতি হয়ে যায় ধীর। কোথাও কোথাও যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে ছিল সড়কে। কোথাও আবার সড়কে কোমর সমান পানি। এতে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

জলাবদ্ধতা ও যানজটের কারণে বিপাকে পড়েন ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজন। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বাসা থেকে বের হয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য পাওয়া যায়নি যানবাহন। আবার রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন পাওয়া গেলেও সেগুলো হাঁকে তিন গুণ-চার গুণ ভাড়া। যানজটের ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে রোখসানা রুমি নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আজমপুর যাব। সকালে আকাশে মেঘ। অন্ধকারেই বের হলাম। এরপর রিকশা না পেয়ে উবার নিলাম আকাশচুম্বী দাম দিয়ে। গাড়িতে বসে মনে হলো নদী হয়ে গেছে সড়কগুলো।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, গতকাল ভারী বর্ষণের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার গ্রিন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম কাজ করায় এসব এলাকার সড়কের পানি নেমে গেছে। তবে কিছু এলাকায় পানি সরতে সময় লাগবে।
যানজট নিরসনে সকাল থেকে সড়কে নিরলস কাজ করে যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। সকাল ১০টায় ট্রাফিক গুলশান বিভাগের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে জানানো হয়, গত রাত থেকে অবিরত বৃষ্টিপাতের কারণে বনানী ঢাকা গেটের সামনের সড়কে বৃষ্টির পানি জমেছে। যে কারণে ইনকামিং/আউটগোয়িং উভয় দিকেই যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ধীর। এমতাবস্থায়, যারা উত্তরা থেকে গুলশান-বনানীর দিকে আসবেন এবং যারা বিপরীতমুখী চলাচল করবেন তারা দ্রুত যাতায়াতের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারেন। দুপুর ১২টায় ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে এক লেন দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। মিরপুর-১০ কাজীপাড়া রুটে চলাচলকারীদের ধৈর্যসহকারে ও সময় নিয়ে চলাচল করার জন্য অনুরোধ করা হয়।