শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মার নদীর তীরে পালেরচর বাজার এখন দেশের অন্যতম টাটকা মাছের কেন্দ্র। বাজারটিতে সারা দিন নদীর টাটকা মাছ বিক্রি হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা মাছ কেনার জন্য এই বাজারে আসেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা এবং বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুই দফায় বসা এ বাজারে অন্তত ৫০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের এমনটাই দাবি।
স্থানীয়ভাবে জানা যায় , ঐতিহ্যবাহী বাজারটি ১৯৭৫ সালে পদ্মা নদীর তীরে কয়েকটি ছাপরা ঘর ও ছোট দোকান নিয়ে জাজিরার পালেরচর বাজারটির যাত্রা শরু। ৫০ বছরের ব্যবধানে সেই বাজারই এখন নদীর টাটকা মাছের জন্য দেশজুড়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রথম দিকে নৌপথে এই বাজারে যাতায়াত করতে হতো। স্থানীয় মানুষেরা বাজারে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী কেনাবেচা করতে আসতেন। এরপর ২০০০ সালের দিকে সড়ক যোগাযোগ চালু হলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাজারে যাতায়াত শুরু করেন। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এখন এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন। পদ্মা নদীতে রাতভর মাছ ধরে কয়েকশ’ জেলে প্রতিদিন এখানে মাছ নিয়ে আসেন। পাইকাররা মাছ নিয়ে যান মাদারীপুর, ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে। ইলিশ, পাঙাশ, বোয়াল, চিংড়ি, বাইম, কাতলাসহ নানা প্রজাতির মাছ এখানে পাওয়া যায়। আকারভেদে প্রতি কেজি মাছ ৮০০ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলে, ব্যাপারী, আড়ৎদার আর ক্রেতাদের ভিড়ে শোনা যায় ভিন্ন ভিন্ন দাম তোলার আওয়াজ। যে দাম বেশি হাঁকে মাছ তার। এ দৃশ্য শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর পালেরচর মাছের আড়তের। এই বাজারে চারটি আড়ৎ, ৩৫ টি খুচরা দোকানে প্রতিদিন কেনা বেচা হয় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মাছ। শুক্র ও শনিবার কেনাবেচা হয় কোটি টাকার ওপরে। পালেরচর বাজারে সারা দিনই টাটকা মাছ কেনাবেচা হয়। এ কারণে ক্রেতারা আসছেন। টাটকা মাছ কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা।
প্রতিদিন হাজারও জেলে পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরে সংসারের খরচ জোগায়। আগে মাছ শিকারের পর দূরের হাটে যেতে হতো বেচার জন্য। তবে, এখন নদী থেকে মাছ তুলেই বিক্রি করতে পারছেন তারা, কারণ মাছ কিনতে শরীয়তপুরে ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকে আসেন ব্যাপারীরা।
লাভ ভালো হওয়ায় জেলেদের জাল ও নৌকা তৈরিতে আড়তদাররা দিয়ে থাকেন আর্থিক সুবিধাও। মাছ কেনা বেচার সময় লাভসহ নেয়া হয় সে অর্থ । এতে লাভবান হন দুইপক্ষই। ক্রেতাদের ভিড় থাকায় জেলেরাও মাছের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন।
আরৎদার শাহজুল বলেন, এখানে পদ্মা নদীর টাটকা মাছ পাওয়া যায়। তাই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে মাছ কেনার জন্য। প্রতি দিনই ভির থাকে বাজারে। এখানে ব্যবসা করে ভালো অছি।
জেলে কুদ্দুস ও শুক্র বলেন , আমারা আগে বিভিন্ন আরতে মাছ ধরে বিক্রি করতাম এখন পালের চর বাজারে ন্যায্য মূল্য পেয়ে এখানে বিক্রি করে থাকি।
শরীয়তপুর জেলার সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মাহমুদ বলেন, জাজিরার পালেরচর বাজারে সারা দিনই টাটকা মাছ কেনাবেচা হয়। যে কারণে ক্রেতারা আসছেন। ক্রেতার ভিড় থাকায় জেলেরাও মাছের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন। পদ্মা নদীর তীরে আড়ত গড়ে ওঠায় মাছ কেনা-বেচা যেমন সহজ হয়েছে তেমনি ঘটছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল