প্রাইম ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম. নাজিম এ. চৌধুরী বলেন, ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য প্রায় সব ব্যাংকই নিজস্ব অ্যাপ চালু করেছে। প্রাইম ব্যাংক ২০২২ সালে চালু করে ‘মাইপ্রাইম’ অ্যাপ। চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে, যা ১ কোটি ১২ লক্ষাধিক ট্রান্সঅ্যাকশনের সমান। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ গ্রাহক নিয়মিত এ অ্যাপ ব্যবহার করছেন। ফলে ঘরে বসেই টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধ, অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স দেখা কিংবা ক্রেডিট কার্ড বিল মেটানো সম্ভব হচ্ছে। সময় ও শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে, ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা কমেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী পর্যন্ত কিউআর কোড ও ইনস্ট্যান্ট পেমেন্টের সুবিধা পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এটি দেশের ব্যাংকিং খাত নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সেলফ-সার্ভিস ব্যাংকিংয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। মাইপ্রাইমের ব্যবহার তারই প্রমাণ। এ প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের সংখ্যা ও পরিমাণ প্রতি বছর গড়ে ১৫০ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহক নিজেরাই অ্যাকাউন্ট খোলা, ঋণ আবেদনসহ নানান সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। ভবিষ্যতে এআইভিত্তিক কাস্টমার সাপোর্ট, স্বয়ংক্রিয় ব্যয় বিশ্লেষণ এবং এআইনির্ভর লোন অনুমোদন যুক্ত হবে। এসব সেবা ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এম. নাজিম এ. চৌধুরী বলেন, লেনদেনে ঝুঁকি থেকে যায় ফিশিং, হ্যাকিং বা ভুয়া অ্যাপে। তবে গ্রাহক সচেতন থাকলে এগুলো অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। অনেকেই এখনো দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার বা ভুল লিঙ্কে ক্লিক করার কারণে প্রতারণার শিকার হন। এজন্য ব্যাংকগুলো টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, ডেটা এনক্রিপশন এবং রিয়েল-টাইম ফ্রড মনিটরিংয়ের মতো নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আমরা গ্রাহকদের সচেতন করতে নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছি এবং ডিজিটাল শিক্ষায় জোর দিচ্ছি।
প্রাইম ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, প্রতিদিনই লেনদেন বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরে এটি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। ই-কমার্স, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইউটিলিটি বিল ও খুচরা ব্যবসায় কিউআর পেমেন্টের ব্যবহার বাড়ায় ডিজিটাল লেনদেন দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। এর মাধ্যমেই ক্যাশলেস সমাজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
তিনি বলেন, প্রাইম ব্যাংকের মাইপ্রাইম অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহক টাকা পাঠানো, ব্যালান্স দেখা, স্টেটমেন্ট ডাউনলোড, চেক অনুরোধ, ক্রেডিট কার্ড ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ এবং কিউআর পেমেন্ট করতে পারছেন। উন্নত লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, লোন আবেদন ও ইনভেস্টমেন্ট ইনসাইটস যুক্ত থাকায় গ্রাহকের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এতে সময়, খরচ ও ঝামেলা কমেছে।
এম. নাজিম এ. চৌধুরী বলেন, মাইপ্রাইমকে আরও উন্নত, নিরাপদ ও গ্রাহকবান্ধব করতে নতুন ফিচার আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এআই ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে গ্রাহকের ব্যয় বিশ্লেষণ, সঞ্চয় পরিকল্পনা ও ঋণ গ্রহণের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি ব্রাঞ্চলেস ব্যাংকিং, আন্তর্জাতিক লেনদেন ও ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেবা চালুর উদ্যোগ চলছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সহজ ভাষায় ইন্টারফেস তৈরি করা হচ্ছে, যাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ে। আমাদের লক্ষ্য মাইপ্রাইমের মাধ্যমে একটি আধুনিক, নিরাপদ ও সর্বজনীন ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা।