বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাত দ্রুত পরিবর্তনশীল। ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো ক্রমেই মোবাইল অ্যাপভিত্তিক লেনদেনে জোর দিচ্ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. শামসুল আরেফিন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের সর্বত্র ব্যাংক এখন অ্যাপ লেনদেনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, এতে সুফল কতটা মিলছে?
এম. শামসুল আরেফিন : বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকই অ্যাপভিত্তিক লেনদেনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে গ্রাহক শাখায় না গিয়েও যে কোনো সময়, যে কোনো স্থান থেকে ব্যাংকিংসেবা নিতে পারছেন। এতে সময় ও খরচ দুটিই সাশ্রয় হচ্ছে, শাখার ভিড় ও চাপও কমেছে। ক্যাশলেস ও পেপারলেস বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য রয়েছে, অ্যাপভিত্তিক লেনদেন তা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলেও সহজে সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে গ্রাহকের আস্থা, স্বাচ্ছন্দ্য ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বহুগুণে বেড়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : মানুষ সেলফ-সার্ভিস ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এ সেবার ভবিষ্যৎ কী?
এম. শামসুল আরেফিন : আগে গ্রাহককে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে হতো। এখন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যালান্স দেখা, টাকা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, ঋণের কিস্তি জমা, এমনকি বিদেশি রেমিট্যান্স গ্রহণ পর্যন্ত ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে। গ্রাহক একে নিরাপদ ও সুবিধাজনক মনে করছেন। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শাখায় না গিয়েই প্রায় সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অ্যাপ লেনদেনে কোনো ঝুঁকি আছে কি? গ্রাহক কতটা সচেতন?
এম. শামসুল আরেফিন : জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ঝুঁকিও রয়েছে। ফিশিং, হ্যাকিং বা ভুয়া অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা ঘটতে পারে। তবে ব্যাংকগুলো নিরাপত্তায় জোর দিচ্ছে, যেমন ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি), টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ও ২৪ ঘণ্টা মনিটরিংব্যবস্থা। গ্রাহককেও সতর্ক থাকতে হবে পাসওয়ার্ড বা ওটিপি কারও সঙ্গে ভাগ না করায় এবং কেবল অফিশিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করা জরুরি। সচেতনতা এখনো বাড়ানোর প্রয়োজন আছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্রতিদিন অ্যাপের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
এম. শামসুল আরেফিন : প্রতিদিনের লেনদেন দ্রুত বাড়ছে। আগামীতে এর পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। ওয়ালেট সুবিধার কারণে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও গ্রাহক লেনদেন করতে পারছেন, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াচ্ছে। তবে এর সঙ্গে চ্যালেঞ্জও আছে, উন্নত সার্ভার ও ডেটা সেন্টার গড়ে তুলতে হবে, যাতে নিরাপদে বিপুল লেনদেন পরিচালনা করা যায়। পাশাপাশি এআই ও ব্লকচেইন ব্যবহার করে প্রতারণা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহক কী কী সেবা পাচ্ছেন?
এম. শামসুল আরেফিন : মোবাইল অ্যাপে এখন গ্রাহক বহুমুখী সেবা পাচ্ছেন টাকা স্থানান্তর, ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট, টিভি, শিক্ষা ফি, টোল ইত্যাদি) পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, ঋণের কিস্তি জমা, রেমিট্যান্স গ্রহণ, কার্ড ও অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট, এমনকি ঘরে বসেই নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা। বিনিয়োগ কার্যক্রম যেমন এফডিআর ও ডিপিএস করাও সম্ভব হচ্ছে। এক কথায় শাখায় না গিয়েই প্রায় সব ধরনের ব্যাংকিংসেবা এখন হাতের মুঠোয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ভবিষ্যতে অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিংসেবার পরিকল্পনা কী?
এম. শামসুল আরেফিন : গ্রাহকবান্ধব ও নিরাপদ ব্যাংকিং নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিত নতুন উদ্যোগ নিচ্ছি। প্রতারণা শনাক্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইনভিত্তিক নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা ব্যবস্থায় কাজ চলছে। সব বয়সের মানুষের জন্য সহজ ইউজার ইন্টারফেস তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সাইবার সিকিউরিটি আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। সরকারের ক্যাশলেস ও পেপারলেস বাংলাদেশ ভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ডিজিটাল ব্যাংকিং সর্বজনীন করার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছি।