ভবনের কোনো কক্ষেরই দরজা-জানালা নেই। চুরি হয়ে গেছে দেয়ালের বেশির ভাগ ইট। বারান্দায় পড়ে আছে খোয়া। অনেক আগেই খুলে নেওয়া হয়েছে ছাদ, জানালা ও দেয়ালের খুঁটির রড। যেন এক বিধ্বস্ত ভবন। এখন কেবল দাঁড়িয়ে আছে ভবনের ধ্বংসাবশেষ। নেই নিরাপত্তা প্রহরী। ভবনের ইট-রড খুলে নিলেও বাধা দেওয়ার কেউ নেই।
এটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি রেলওয়ের পরিত্যক্ত বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও সেনেটোরিয়াম (স্বাস্থ্য নিবাস) ভবনের অবস্থা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা রেলস্টেশন থেকে প্রায় ২০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের টিলায় হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে আছে তিনটি ভবন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় গত ৩৪ বছর ধরে ভবনটি এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত।
তবে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগ ভবনটিকে নতুন করে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। সেখানে ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ভবন ও এলাকাটি পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে যক্ষ্মা থেকে মুক্তির জন্য লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে পাহাড়ের টিলায় নির্মাণ করা হয়েছিল বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি। এখানে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রেলওয়ের কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো। পরে যক্ষ্মা কমে আসায় ১৯৯২ সালে হাসপাতালটি কুমিরার এই ভবন থেকে নগরের সিআরবি এলাকার স্থানান্তর করা হয়। কার্যত এরপর থেকেই বিশাল এ জায়গা ও ভবন অবহেলায় পড়ে আছে। এ নিয়ে রেলওয়ে নেই কোনো পরিকল্পনা। আয় না থাকায় ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পাহারার ব্যবস্থা করেনি রেল কর্তৃপক্ষ। গত ১৫ বছর ধরে নেই নিরাপত্তা প্রহরী। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আবদুল আহাদ বলেন, ১৯৯২ সালে বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি কুমিরা থেকে সিআরবিতে স্থানান্তরের পর সেখানে আর কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় না। সেটি অনেক দিন ধরেই অব্যবহৃত। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, কুমিরা বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরেই পড়ে আছে। সেখানে ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি স্থানান্তর করার চিন্তা চলছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম জায়গাটি পরিদর্শনও করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে। তিনি বলেন, ফৌজদারহাট এলাকায় থাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি সংগত কারণে সেখান থেকে স্থানান্তর করা দরকার। বিকল্প স্থান হিসেবে কুমিরার ওই জায়গাটি পছন্দ করা হয়েছে। রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতাল এলাকার আয়তন প্রায় ১০ একর এবং এর আশপাশে রেলওয়ের জায়গা আছে প্রায় ৩০ একর। হাসপাতাল ও হাসপাতাল ঘিরে জায়গার মোট পরিমাণ প্রায় ৪০ একর।