২০ আগস্ট, ২০২৩ ২০:০৯

এমটিএফই’র ফাঁদে সর্বস্বান্ত উত্তরাঞ্চলের হাজারও গ্রাহক

অনলাইন ডেস্ক

এমটিএফই’র ফাঁদে সর্বস্বান্ত উত্তরাঞ্চলের হাজারও গ্রাহক

এমএলএম ব্যবসার নামে প্রায় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই)। এমএলএম কোম্পানির এই প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন দেশের নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বহু মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় সব ব্যবহারকারীর ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক দেখানো শুরু করে অ্যাপটি। গ্রাহকদের পক্ষে স্বয়ংক্রিয় লেনদেনের পর বিপুল লোকসান হয়েছে বলে দাবি করেছে অনিয়ন্ত্রিত এই সংস্থা।

এমটিএফই দাবি করেছিল, তারা কানাডায় নিবন্ধিত সংস্থা। এর কার্যক্রম শ্রীলঙ্কা, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও ভারতেও ছড়িয়ে ছিল। এসব দেশের ব্যবহারকারীদেরও পরিণতি একই।

জানা গেছে, কেউ জমি বন্ধক রেখে, কেউ জমানো টাকা আবার কেউবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিল অ্যাপ ভিত্তিক ওই অনলাইন মাধ্যমে। দেশের উত্তরাঞ্চলেরর জেলাগুলোতে এমটিএফই অ্যাপের কয়েজন করে সিও পদ ধারিও কাজ করতেন। অন্যকে অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়ার মাধ্যমে তারাও পেতেন মোটা অংকের কমিশন।

নওগাঁ শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল ওই অ্যাপটি। যেখানে কেবল শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিতরাই নয়; বিনিয়োগ করেছিলেন ব্যাংকার, শিক্ষক এমনকি সাংবাদিকও। কিন্তু হঠাৎই ঘটে ছন্দপতন। গত দুই সপ্তাহ থেকে আ্যপটি থেকে বিনিয়োগকারীরা আর কোনো টাকাই উঠাতে পারছেন না। এতে যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা এখন সর্বস্বান্ত। উল্টো ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই।

ভুক্তভোগীরা জানান, এখন আর তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠাতে পারছেন না কেউ। প্রতারণা করে তাদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে এমটিএফই। লাভের আশায় এসে উল্টো ঋণের বোঝাও ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই। তবে প্রথম দিকে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা কিছুটা বিনিয়োগকৃত অর্থ ও মুনাফা তুলে নিতে পেরেছেন। শেষের দিকে যারা ছিলেন, তারাই সর্বস্বান্ত হয়েছে।

পরিচয় গোপন রেখে রানীনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা জানান, মোবাইল কিংবা ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই তার। ওই বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষকের প্রলোভনে ১ লাখ কয়েক হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন ওই অ্যাপ বিজনেসে। বিনিয়োগের পর একবারও লভ্যাংশ পাননি। তুলতে পারেননি বিনিয়োগকৃত অর্থও। উল্টো এখন বেশ কয়েকজন তাকে চাপ দিচ্ছেন কোম্পানির লোকসান পুষিয়ে দিতে।

জেলার নলদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিমল চন্দ্র বলেন, লাভের আশায় প্রায় আড়াইশ ডলারের মতো বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। অবশ্য একটু আগে থেকে এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে আনতে পেরেছেন তিনি। তবে কোনো লাভ করতে পারেন নি তিনি।

নওগাঁর শৈলগাছীর বিনিয়োগকারী আলামিন বলেন, একজন আমাকে বুঝাল এমটিএফইর মাধ্যমে ঘরে বসেই টাকা কামানো যায়। পরে এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে সেখানে বিনিয়োগ করি। কিন্তু ওই অ্যাপসে আর ঢুকা যায় না। এখন টাকা না পেলে এনজিওর টাকা পরিশোধ করবো কিভাবে? কোনো কিছুই বুঝতে পারছি না।

গ্রাহকদের বিভিন্ন দলের নেতারা অনুমান করছেন, দেশে এমটিএফইর ফাঁদে পড়ার সংখ্যা এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ হতে পারে। তাদের ধারণা, এই কাণ্ডে প্রায় হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ ও নিষিদ্ধ। এর পরও কমপক্ষে ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিনশেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হবে—এমন কল্পিত মুনাফার লোভে শত শত মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন এই কোম্পানিতে।

এমন প্রতারণার বিষয়ে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এবিষয়ে তাদের কাছে এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ আসলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়মে এমএলএম ব্যবসা অবৈধ। যে প্রতিষ্ঠানটি এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, সেটি দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানও নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমএলএম নিয়ে কাজ করে না। ডিজিটাল কমার্স নিয়ে কাজ করছে। তবে বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংকের  বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিষয়টি দেখভাল করে থাকে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর